পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা নাই। ভিক্ষা সে চাহিতে আসিয়াছে, একমুষ্টি চাল, কিম্বা একটি পয়সা তার প্রার্থনা, তবু কেউ তাকে ভিখারী ভাবিও না। মোহন ভাবিয়া রাখে, বাড়ী ফিরিয়া আজ পীতাম্বরকে ডাকিয়া একটি টাকা দিবে, সকলের সামনে । না, এক টাকা নয়, চার আনা পয়সা । বলিবে আপনার হাত খরচের জন্য দিলাম । রোজ। আপনাকে চার আনা করে দেব । চার আনায় আপনার কুলোবে তো ? শ্ৰীপতির চাহিতে লজ্জা নাই। চাওয়ারও তার শেষ নাই। সে পয়সা চায়, পুরাণে কাপড়, পুরাণে জুতা চায়, পেসাদ চায়, আমোদ চায়, পরামর্শ চায়, কাজ চায । তার চেয়েও বেশী চায় দরদ । কারও অবহেলা সে সহিতে পারে না, কড়া কথায় তার চোখে জল আসিয়া পড়ে। প্ৰতিধ্বনি ছাড়া যেমন শব্দ মুহূত্তের বেশী বঁচিতে পারে না, অন্যের মুখে হাসি না ফুটিলে তার মুখের হাসি তেমনি সঙ্গে সঙ্গে মরিয়া যায়। জিনিস তৈরী করা আর সেই জিনিস বিক্ৰী করার জন্য হন্যে হইয়া ঘুরিয়া বেড়ানোর একটান। একঘেয়ে জীবন যাপনের পর এতগুলি দিনের অবসর সে বোধ হয়। এই প্ৰথম পাইয়াছে, গম্ভীর নির্বাক মানুষটা অনভ্যস্ত মুক্তির আনন্দে চপল ও মুখর হইয়া উঠিয়াছে, হাতুড়ি ধরার আগে ছেলেবেলা যেমন ছিল। স্তব্ধ বিস্ময়ে সে সহরকে দেখে, পূজা করে উত্তেজনা ও উচ্ছাসে, অন্তহীন প্রশ্নে। তার ভাব দেখিয়া সকলে হাসে, কিন্তু তার ভাবপ্রবণতা সকলের মধ্যে সঞ্চারিত হয়, সকলের বিস্ময়ানুভূতি আবার ধারালো হইয় উঠে। কেবল সকালে যখন তার ঘুম ভাঙ্গে, দুপুরে যখন অন্য সকলে ঘুমায়, রাত্রে যখন সে নিজে ঘুমাইতে যায়, মুখ দেখিয়াই টের পাওয়া যায় তার মন কেমন করিতেছে। স্তিমিত চোখ, নীচের দিকে ঝুকিয়া পড়া মুখের দুটি প্ৰান্ত । খাইতে বসিয়া সে নানা ব্যঞ্জনের দিকে তাকায়, ভাত নিয়া নাড়াচাড়া করে । আসিবার দিন বেী তাকে কুচো চিংড়ি দিয়া কচুর ঘণ্ট রাধিয়া খাওয়াইয়াছিল। এসব তারকারীর স্বাদ তো সে রকম নয় ? বাড়ীর পিছনে জলায় এবার অজস্র কচু হইয়াছে, বৌ হয়তো রোজ কচুঘণ্ট রাধিয়া ছেলেমেয়েদের খাওয়ায়, নিজে খায় । মন খারাপ হইলে শ্ৰীপতি পীতাম্বরের কাছে গিয়া খানিক তফাতে উবু হইয়া RR