পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা বাড়ীতে শুধু বুড়ী মা, ভাল দেখিতে পায় না। বিনয় হালদার হয়তো আবার মাছ ধরিবার ছলে ছিপ হাতে বাড়ার পিছনে বিলটার ধারে বসিয়া থাকে, দীনু হয়তো নানা ছুতায় বাড়ী আসিয়া গল্প জুড়িয়া দেয়। ইন্দ্র এই জ্যোতির মত চুল ছাটে, কদমকে দেখিলেই সে শিস দিতে দিতে চলিয়া যাইত, সে চলিয়া আসিবার পর এখন হয়তো চলিয়া যায় না! কদম তাড়াতাড়ি বাড়ীর মধ্যে ঢুকিয়া পড়িত, এখন হয়তো দাড়াইয়া থাকে। কে জানে কি করিতেছে কদম ? চার বছর কদম ঘর করিতে আসিয়াছে, চার বছর কদম হাসে নাই। কাছে টানিতে গেলে পাশ ফিরিয়া শুইয়। বলিয়াছে, এত কেন ? পয়সা রোজগারের ক্ষমতা নাই যে তিন ব্যাটাবেটির বাপ যোয়ান মন্দ পুরুষের, তার অতি সখা কেন ? দিনরাত কানের কাছে মন্ত্র জপ করিয়াছে, গয়না দাও, শাড়ী দাও, মাছ দুধ খেতে দাও, আমি তোমার তিন ব্যাটাবেটির মা বুড়ি বৌ তো নাই, আমার ওসব চাই। নিজের কচি ছেলেটা তার কঁাদিয়া কঁাদিয়া ঘুমাইয়া পড়িত, বৌকে শাপিতে শাপিতে শ্ৰীপতির মা কঁাদিয়া ফেলিত, গুমা খাইয়া কদম বসিয়া থাকিত। তাতানো লোহা হাতে শ্ৰীপতি তাকে শাসন করিতে আসিলে মুখ তুলিয়া দাতে দাঁতে ঘষিয়া কদম বলিত, “আমি কারো মা নাই। ছেলের মার বুকে দুধ থাকে, এক ফোটা দুধ আছে আমার বুকে ?” বলিতে দলিতে কদম উঠিয়া দাড়াই ত, ছেড়া শাড়ীর অচল সরাইয়া বুক উদলা করিয়া দিত, সামনে রুখিয়া আসিয়া বলিত, “কেটে নাও, দা” দিয়ে কেটে না ও মাই, রক্ত যা পড়বে তাই খাই ও ছেলেকে ৷” তারপর কদম হাসিয়াছিল । পয়সা রোজগার করিতে সে বিদেশে যাইবে স্থির হওয়ার পর । একেবারে যেন নতুন মানুষ হইয়া গিয়াছিল। কদম। নিজেই গলা জড়াইয়া ধরিত, না বলিতে পিঠের ঘামচি মারিয়া দিত, কিভাবে তাকে প্ৰসন্ন করিবে ভাবিয়া যেন দিশেহারা হইয়া থাকিত। জট ছড়াইয়া সে মৃত সতীনের মেয়ের চুল বাধিয়া দিয়াছিল। এতকাল পরে, সতীনের ছেলের খোস প্যাচড়া সাফ করিয়া নিমপাত লাগাইয়া দিয়াছিল। এত করিয়াছিল। কদম তাকে দূরে পাঠানোর জন্য ! Yপয়সা রোজগার করিতে দূরে পাঠানাের জন্য ! এখন সে কি করিতেছে ? We S