পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা এখানকার অনেক খোলার ঘরেও বিদ্যুতের আলো জলে, চাপার ঘরে লণ্ঠন। মেঝেতে বিছানা পাতা, চাদরটা ফাঁসাই মনে হয়, গোটা তিনেক বালিশ আছে, তাদের ওয়াড়গুলি ময়লা আর একটু ছেড়া। এককোণে উপুড় করা ঘষামাজ বাসন, কাঠের আলনায় মোটে দুটি শাড়ী, একটি সেমিজ আর একটি গামছা, পুরাণে পাড়ে তৈরী ঢাকনা দেওয়া একটি বাক্স, দেয়ালে আঠা দিয়া আটকানো আর পেরেকে লটকানো অনেকগুলি ছবি, কোনটা পুরাণে ক্যালেণ্ডারের, কোনটা মাসিক পত্রের, মিলের কাপড়ে যে ছবি অ্যাটা থাকে, তাও আছে। হামা দেওয়ার ভঙ্গিতে নধর বালগোলাপ, স্কুলাঙ্গী উলঙ্গিনী দেবদেবী, বাগানের মত সাজানো বন, উইঢিবির মত পাহাড় আর নালার মত নদীতে মুক্তিমতা প্ৰকৃতি দেয়ালে এখানে ওখানে এলোমেলোভাবে ছড়াইয়া আছে। একটি ছবি দেখিয়া কদমকে শ্ৰীপতির মনে পডে। ছেলে কোলে এক গেয়ে মায়ের ছবি দেখিয়া । ছবি দেখিয়া কদমকে শ্ৰীপতির মনে পড়ে, ঘরের মাটিলেপা দেয়াল আর সেঁদা গন্ধে মনে পড়ে দেশের বাড়ীর ঘরের কথা। একটা লণ্ঠন আছে শ্ৰীপতির, মাঝে মাঝে জ্বলে। চাঁপার লন্ঠনের মত এমন পরিষ্কার আলো দেয় না, ধোয়া তুলিয়। মিট মিট করিয়া জ্বলে। তবু সেই আলোতেই চাপার বাসনগুলির মত কদমের মাজ বাসনও এমনি চক চক করে । সেদিন দশটার ডাকে কদমের একখানা চিঠি আসিল । মোহনের ভাগ্নে সুধীর স্কুলে পড়ে, তাকে দিয়া লিখাইয়াছে। টাকা পাঠায় না কেন শ্ৰীপতি ? সকলে কি তারা না খাইয়া মরিবে ? তাড়াতাড়ি বেশী রোজগার করুক শ্ৰীপতি, তাড়াতাড়ি একবার দেশে ঘুরিয়া আসুক, কদম তার পথ চাহিয়া আছে। “কি করি কত্তা এখন ?” শ্ৰীপতির অসহায় বিমূঢ় ভােব আর স্ত্রীলোকের মত একান্ত নির্ভর করার স্বভাব মোহনকে বিরক্ত করে, আমোদ দেয়। আমোদ দেয় বেশী, প্রশ্রয় দিতে ইচ্ছা জাগে। শ্ৰীপতি পীতাম্বরের মত নয়, একটু আশ্রয় পাইয়াই আর সব চাওয়া সে ছাটিয়া ফেলে না । “কি করবি আবার ? টাকা পাঠিয়ে দে।” V2 eV)