পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী ট্রেণে যাওয়া ছাড়া উপায় নাই, গাড়ীটাকে অসুখ সারাইতে হাসপাতালে দেওয়া হইয়াছে। সন্ধ্যার এমন বিশ্ৰী লাগে ট্রেণে যাইতে ! ফোন করিয়া দিলে সহর হইতে গাড়ী নিয়া আসার বন্ধু অবশ্য আছে কয়েকজন, কিন্তু আজ যখন মোহন আসিয়াছে, দু’চার ছ’মাসেব মধ্যে সে যখন আর আসি1ে না, আজ আর কাউকে ডাকিয়া কাজ নাই । नवTी श्gन । ভাবপ্রবণতা নাই বলে, তবু যে সন্ধ্যা এমনভাবে কি কবিয়া হাসে মোহন বুঝিতে পারে না। “আমি একটা গাড়ী কিনেছি সন্ধ্যা ।” “কিনেছো ? বলে কি ! বাড়ীতে ফোন করে দাও না, ড্রাইভার গাড়ীটা নিয়ে আসুক ?” এগারটার সময় মুষলধারে বৃষ্টি নামিল। বেলা একটার সময় তারা যখন বাহির হইল, তখনও বৃষ্টি পডিতেছে। ‘তবু রেস খেলতে যাওয়া চাই ? সন্ধ্যা আগের বারের মতই ভাবের উদ্দীপনার রসালে হাসি হাসে । ‘বৃষ্টি থেমে যাবে।” সহরের মধ্যে পথে নানা স্থানে জল জমিয়াছে, এক জায়গায় এত জল জমিয়াছে যে ট্রামবাসী সব দাড়াইয়া আছে। দেখিয়া গ্রামের বন্যার কথা মোহনের মনে পড়ে । পথের বন্যা কয়েকঘণ্টা পরে সরিয়া যাইবে, গ্রামের বন্যা দিনের পর দিন। পথঘাট গৃহাঙ্গন জুড়িয়া থাকে, ঘর ও ভাসিয়া যায় অনেক। গ্রামের মানুষ চুপচাপ সহা করিয়া যায়, এখানে এই সাময়িক অসুবিধার জন্য ও মানুষ কি ভাবে গজর গজর করে, খবরের কাগজে কড়া কড়া মন্তব্য বাহির হয় ! সহরের মানুষের কি প্ৰাণশক্তি বেশী? নিজেদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার কি তারা বেশী বোঝে ? অথবা হয়তো গ্রামের মানুষের জীবন দুৰ্বহ করেন স্বয়ং প্ৰকৃতিরূপী ভগবান, যার বিরুদ্ধে নালিশ করা চলে না । সহরের সুবিধা অসুবিধার ব্যবস্থা মানুষের হাতে, সহরবাসী তাই সুবিধার একটু অভাব হইলেই অসন্তোষ জানায় ! সকলে জানায় কি ? সহরে উজ্জল আলোর গাঢ় ছায়ান্ধকারে সহরের সব রকম সুবিধা হইতে বঞ্চিত যারা বাস করে ? WSV