পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী বিষাদ তো তাদের দরকার হয় না । জীবনটা ওদের কৃত্রিম মনে হয় কেন জানেন ? সহরে জীবনের বৈচিত্র্য ওদের সহজে অবাক হবার ছেলেমানুষীটা নষ্ট করে দেয়। যন্ত্রের বিস্ময়, নান-ধরনের মানুষ আর তাদের বিচিত্র স্বভাব, বিচিত্র মতিগতির বিস্ময়, খাপছাড়া ঘটনার বিস্ময় এ সব যায় কেটে । আর সেই সঙ্গে রূপকথার আদর্শ আর নীতিবাদের স্বাদটা একটু পানসে হয়ে যায়। আলু সিদ্ধর চেয়ে তখন আলুর চাপ ভাল লাগে, স্বভাব সুন্দরীর ঘামে আর তেলে ভের্জা চকচকে মুখের চেয়ে কলেজ গার্লের পাউডার দেওয়া মুখের লাবণ্য বেশী পছন্দ হয়, বোকার মত আলাপ করার বদলে কথায় কিছু প্যাচ আর জটিলতা আনে, দাদামশায়ের ধাঁধার বদলে ক্রসওয়াড পাজল সলভ করে আনন্দ পায়।” তার কথাটাই নিজের পক্ষে যুক্তি হিসাবে কাজে লাগিয়ে সন্ধ্যা বলে, ‘তার মানেই তো হৃদয় ওদের একটু শক্ত হয়ে যায়। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কে বিকার এলে জীবন কৃত্রিম হয়ে ওঠে না ? সহরের লোক যে যার নিজেকে নিয়ে থাকে, কেউ কারো দিকে ফিরেও তাকায় না । পাশাপাশি বাড়ী, এক বাড়ীর লোক জানেও না। আরেক বাড়ীর লোকেরা কি করে বেঁচে আছে, কেয়ারও করে না। মড়াকান্না শুনলেও একবার উকি মেরে দেখতে যায় না কে মরল । কেবল তাই নয়, বছরের পর বছর ধরে যাদের মধ্যে মেলামেশা ঘনিষ্ঠতা চলেছে তাদের মধ্যেও শুধু থাকে একটা বাইরের সম্পর্ক, বন্ধুত্ব হয় না, হৃদয়ের যোগাযোগ হয় না।’ “সেটাই তো স্বাভাবিক।” ‘স্বাভাবিক ? হৃদয়হীন স্বার্থপর মানুষ স্বাভাবিক ? ‘হৃদয়হীন স্বার্থপর মানুষ নয় । ব্যক্তিগতভাবে একটা মানুষ কজনের সঙ্গে হৃদয়ের যোগাযোগ বজায় রাখতে পারে বলুন তো ? সহরে যারা থাকে বছরের পর বছর ধরে কত লোকের সঙ্গে তাদের মেলামেশা করতে হয় ভাবুন তো ? সকলের সঙ্গে অন্তরঙ্গতা করতে হলে হৃদয়ের অবস্থা একটু কাহিল হয়ে পড়বে না ? বিশ্বপ্ৰেমিক সমষ্টিগতভাবে পৃথিবীর সব মানুষকে ভালবাসতে পারে, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে কাজনের জন্য নিজের মনকে কঁদাবার ক্ষমতা তার আছে ? একশ’ লোকের সঙ্গে যারা শুধু ভদ্রতার সম্পর্ক রেখে চলে, একটু খোজ নিলেই দেখবেন ওই একশ’জন ছাড়া আরও পাঁচ সাতজন আছে, যারা তার বন্ধু। পাশের বাড়ীতে মড়াকান্না শুনলে যে উকি মারতে যায় না, কারো সর্দি VORS