পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা তর্ক শেষ করিয়াছিল যেন তার মোট কথাটা জগদানন্দ মানিয়া নিয়াছে, খুটিনাটি নিয়া আর তর্ক করিয়া লাভ নাই। সন্ধ্যার স্বাস্থ্য সত্যই ভাল নয়। সত্যই তার গা বমি বমি করিতেছিল, মাথা ঘুরিতেছিল, কিছুই ভাল লাগিতেছিল না। তবু যে আজ সে অভিসারিকার ভূমিকা অভিনয় করিতেছে তার মধ্যেও এতটুকু ফাকি দেয় নাই। তার উপায় নাই ফাকি দেওয়ার। মোহনকে জয় না করিতে পারিলে নিজে সে মিথ্যা হইয়া যাইবে। চিন্ময়ের কাছে হার মানিবে। সন্ধ্যার বদলে সে নিজে যদি এই সুযোগটা সৃষ্টি করিত ! কত পৃথক হইয়া যাইত ঘুমন্ত জগতে চুপি চুপি তার সন্ধ্যার কাছে যাওয়া। একদিন সত্যই সে এমনি অভিসারের আয়োজন করিত। সন্ধ্যার বাড়ীতে, ঘোড়দৌড়ের মাঠে আর হোটেলে যে দিনটা সন্ধ্যার সঙ্গে কাটিয়াছে, সেই দিনই সে জানাইয়াছিল সহরে বাস করিতে আসিয়া এই একটি অনিবাৰ্য সম্ভাবনা সে জীবনে টানিয়া আনিয়াছে । নিজের সঙ্গে লড়াই করিতে করিতে একদিন হার মানার কল্পনায় তার ফাঁকি ছিল না। এটুকু জানা না থাকিলে সন্ধ্যার ধৈৰ্য্যের অভাবটা হয়তো তার এত श्रद्धां० लांडि न। এটা সন্ধ্যার উচিত হয় নাই । জীবন সস্ত হইয়া যাওয়ার দুঃখে অভিভূত মোহন হয়তো আরও দু'এক ঘণ্টা তার নিজস্ব সেই বসিবার ঘরেই কাটাইয়া দিত। হঠাৎ আরও ভয়ঙ্কর একটা ভাবনা মনে আসিয়া তাকে ঝাকি দিয়া সক্রিয় করিয়া তুলিল । প্ৰতীক্ষা করিতে করিতে সন্ধ্যা যদি ধৈৰ্য্য হারায় ? নিজে যদি সে এ ঘরে তার কাছে চলিয়া আসে ? তাড়াতাড়ি মোহন টেবিল ল্যাম্পের সুইচটা টিপিয়া দেয়। দুইটি ঘরের রুদ্ধ দুয়ার পার হইয়া সন্ধ্যার ঘরের দরজায় হাত রাখিয়া সে দাড়াইয়া থাকে। সন্ধ্যার দুয়ার ভেজানো নয়। ভিতর হইতে সে দরজাটি বন্ধ করিয়াছে! সেখানে দাড়াইয়া থাকিতে থাকিতেই গভীর আরামে চোখে জল আসার মত তাড়াতাড়ি মোহনের চেখে ঘুম আসে। VRS