পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা আরেকটি ভেজানো দরজা খুলিতে গিয়া সে যেন বাধা পাইয়াছে। লাবণ্যের। কষ্ট দেখিয়া তার মায়া হইত নিশ্চয়, এখন আর কারও জন্য মায়া মমতা কিছুই মাথা তুলিতে পারে না। লাবণ্যকে একটা বড়ি খাইতে দিয়া নিজে সে নীচে চলিয়া যায়, পাঠাইয়া দেয় নলিনীকে । সকালে ঝরণা আসে । কাল রাত্রে দাদার ভাবভঙ্গি দেখিয়া সেও বুঝি কিছু টের পাইয়াছিল, সকালে উঠিয়াই সে সন্ধ্যার বাড়ীতে ফোন করিয়াছিল। সকালে সন্ধ্যা এখন কোথায় আছে তার বাড়ীর লোক বলিতে পারে নাই, শুধু জানাইয়াছে যে সে কাল সন্ধ্যায় মোহনের বাডী নিমন্ত্রণ রাখিতে বাহির হইয়াছিল। ঝাবণাব ও নিমন্ত্রণ ছিল। সে অভিমান করিয়া আসে নাই । অভিমানের কারণ, মোহন নিমন্ত্ৰণ কবিতে গেলে তাকে সে নগেনকে পাঠাইয়া দিতে বলিয়াছিল। কিন্তু নগেন যায নাই । কিন্তু দাদার সমস্যা অভিমানের চেয়ে বড় । সন্ধ্যা এখানে আছে অনুমান করিয়া সে ছুটিয়া আসিয়াছে। মোহন যখন কাছে আসিল, বৌদির সঙ্গে ঝরণার বুঝাপড়াটা সমাপ্তির দিকে চলিয়াছে, রাগে দুঃখে অভিমানে ঝরণা কঁাদ কঁদ এবং মুখখানা তার লাল । 'না এলে তুমি, না এলে । তুমি যা খুশী করবে, আমরা চিরকাল সয়ে যাব ভেবেছ ? দু’মাসের মধ্যে দাদাব যদি ন! আবার আমি বিয়ে দিই—” “আমি বেঁচে থাকতে ? মবে যাওয়ার পরেও পারবে না। ভাই, বডড বেশী রকম খাটি তোমার দাদার ভালবাসা ।” “মরাই ভাল তোমার। তুমি মর।” মোহনকে ঝরণা দেখিতে পায় নাই, দৃষ্টিটা সন্ধ্যার মান মুখেই আটকানো ছিল। দাতে র্দাত ঘষার মত একটা মুখভঙ্গি করিয়া সে ভিন্ন সুরে বলিতে থাকে, ‘দাদার আমি বিয়ে দেব, দেখো তুমি। এমনি না পারি, আমার বন্ধুকে দিয়ে দাদাকে নষ্ট করবো । তখন তো বিয়ে না করে পারবে না ।” এবার ঝরণার চোখ দিয়া জল বাহির হইয়া আসে। দৃষ্টি ঝাপসা হওয়ার সঙ্গে তেজ ও বোধ হয় তার বিমাইয়া যায়, ধাপ করিয়া সে বসিয়া পড়ে একটা চেয়ারে । সন্ধ্য। বাহির হইয়া গেলে মোহন ও কলের মত তার সঙ্গে যায়। সন্ধ্যাকে গাড়ীতে বসাইয়। সে কিন্তু বাড়ীর মধ্যে ফিরিয়া আসে। \\))