পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা টাকা না থাকায় দামী হাত ঘড়িটা জমা দিয়া তেল কিনিয়া বাড়ী ফিরিয়াছে। এসব বাড়ীর লোকের জানিবার কথা নয় । তবু মোহনের বুকে অভিমান উথলাইয়া উঠে। একবার কি জিজ্ঞাসা করিতে নাই ; তুমি খাইয়া আসিয়াছ কি ? দেশে থাকিতে সকালে আত্মীয়ের বাড়ী গিয়া বেল তিনটায় ফিরিলেও তো লাবণ্য এবং মা ছাড়াও বাড়ীর তিনচার জন মানুষ জিজ্ঞাসা করিত, খেয়ে এসেছে ? তার খাওয়া দাওয়া সম্পর্কে বাড়ীর মানুষ উদাসীন হইয়া গিয়াছে। লাবণ্য এবং মা পৰ্য্যন্ত জিজ্ঞাসা করিয়া জানিয়া নিশ্চিন্ত হইতে চায় না যে সত্যই সে খাইয়া আসিয়াছে। জগদানন্দ বিদায় নেওয়া মাত্র মোহন বাড়ীর মানুষের সঙ্গে একটা খণ্ডযুদ্ধ বাধাইয়া দেয়। স্নানের ব্যবস্থায় সামান্য ত্রুটির জন্য জ্যোতিকে ধমকায়, মাছ না থাকায় শুধু ডাল তারকারী এবং তাড়াতাড়ি মোড়ের দোকান হইতে কিনিয়া আনা দই মিষ্টি দিয়া মধ্যাহ্নভোজন শেষ করিতে হওয়ায় গর্জন করিয়া ওঠে । মা গিয়াছিলেন দামী গারদের শাড়ী পরিয়া সহরের পাড়া বেড়াইতে । আরও ঘণ্টাখানেক পাড়া বেড়াইয়া বাড়ী ফিরিয়া গরদের কাপড় ছাড়িয়া থান ধুতি পরিয়া তিনি একটু শুইতেন। মোহনের পরিত্যক্ত ধুতি পরা আশ্রিত মঙ্গলা তাকে ডাকিয়া আনিল । জানাইল, মোহন বাড়ী ফিরিয়া পাগলের মত করিতেছে, লাথি মারিয়া সকলকে দূর করিয়া দিবার কথা বলিতেছে। গরদের শাড়ী ছাড়িয়া থান ধুতি পরিতে পরিতে মা মোহনের গর্জন আর ধমকানি শুনিলেন। তারপর ছেলের সামনে গিয়া শান্ত সুমিষ্ট সুরে বলিলেন, ‘তুই নিজেই একটা হুকুম দিবি, বাড়ীর লোক তোর হুকুম মত কাজ করলে নিজেই আবার রাগারগি করবি ? এ কোন দেশী বুদ্ধি বিবেচনা মেজাজ হয়েছে তোর ?” “কি হুকুম দিয়েছিলাম ?” عاد عسكال “তোর মনে থাকে না বলেই তো মুস্কিল। এই সেদিন বেলা দুপুর করে বাড়ী ফিরলি, তোর জন্য উনান জ্বলছে, মাছটাছ সব রাখা হয়েছে দেখে যেন ক্ষেপে গেলি একেবারে। মনে নেই? সবাইকে ডেকে ঢালাও হুকুম দিলি, বারটার মধ্যে উনান নেবাতে হবে, খাওয়া দাওয়া সারিতে হবে ? ৩৩৭"^' . ኣs(¢).