পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা বাহিরের অনেকের কাছেও ব্যাপারটা একটু দুৰ্বোধ্য ঠেকিতে লাগিল। সাত দিন পরেই ভাই-এর জন্মদিনে সকলকে নিমন্ত্রণ করার ইচ্ছা যদি মোহনের ছিল, সেদিন অকারণে সকলকে ডাকার কি প্রয়োজন ছিল তার ? তাড়াতাড়ি সকলের সঙ্গে ভাবি জমাইয়া ফেলিবার জন্য মোহন যে কী ব্যাকুল হইয়া পড়িয়াছে, জানা থাকিলে হাসিই সকলের পাইত সেদিন পার্টি দিয়া মোহন টের পাইয়াছিল, মানুষের সঙ্গে তাড়াতাড়ি ঘনিষ্ঠত জমানোর এই উপায়টি সর্বশ্রেষ্ঠ—সকলকে বাড়ীতে আনিয়া উৎসব করা । একটু বাড়াবাডি যদি হয় তো হোক। আরম্ভ • করিতেই তার দেরী হইয়া গিয়াছে অনেক, তাড়াতাড়ি না করিলে চলিবে কেন ? ধীরে সুস্থে সহরের সামাজিক জীবন গড়িয়া তুলিবাব সময় তার নাই, তাকে অন্যদিকেমন দিতে হইবে। সেদিকটা ও কম গুরুত্বপূর্ণ নয় — এবং গুরুত্ব দিন দিন বাড়িয়াই চলিবে। খরচ সম্পর্কে ম্যাব অনাবশ্যক কর্তালি পছন্দ না করিলেও টাকার ব্যাপারে উদাসীন থাকিবাব উপায় নাই। দুশ্চিন্তা না হোক, টাকার চিন্তা করিতে হয় বৈকি। টাকা যে তাকে আনিতে হইবে, সে তা জানে—প্ৰথম হইতেই জানিত। গ্রামে বাস করিবার সময় সহরের জীবনের কল্পনায় আয় বাড়ানোর জন্য নিজের কর্ম ব্যস্ততা ও সে কি কল্পনা করে নাই ? সে সব কল্পনার অনেক কিছুই বদল হইয়াছে সত্য কিন্তু মূল কথাগুলি বদল হয় নাই। কেবল সহরের সামাজিক জীবন গড়িয়া তোলা নয়, আয় বাড়াইবার ব্যবস্থাও তাকে করিয়া নিতে হইবে । তবে খবচ যে এত বেশী হইবে, কাজে নামার আগে এদিকের জীবনটা গড়িয়া তুলিবার সময় সংক্ষিপ্ত করিয়া ফেলিতে হইবে—এ ধারণা তার ছিল না। তা হোক, সময় যা আছে, তাই যথেষ্ট। দশজনের মধ্যে নিজের স্থানটি দখল করার জন্য তাকে শুধু উঠিয়া পড়িয়া লাগিতে হইবে। নগেনের জন্মদিনের উপলক্ষ না থাকিলেও মোহন কোন কারণ ছাড়া এমনিই সকলকে বাড়ীতে নিমন্ত্ৰণ করিত। মানুষকে বাড়ীতে ডাকিয়া আনন্দ করা তো দোষের নয় । এবার ও অনেক টাকা খরচ হইয়া গেল-আগের বারের চেয়ে বেশী। কিন্তু মা এবার কিছুই বলিলেন না। রাগের মাথায় সেদিন যে কথা বলিয়া ফেলিয়া ছেলের সম্মুখ হইতে তিনি \33 Տ