পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা প্ৰথম প্ৰথম শ্ৰীপতির রীতিমত ভয় করিতে থাকে। কথা না বলিয়া সে কাঠ হইয়া বসিয়া থাকে। লন্ঠনের বাতি একটু বাড়াইয়া দিয়া দুর্গা জিজ্ঞাসা করে, “নতুন এয়েছে। সহরে, না ?” ‘না, নতুন কেন। অনেকদিন এয়েছি।” “কারখানায় কাজ কর না ?” ‘হঁ | মস্ত কারখানা ।” ‘বৌ আছে না ?” ‘আছে। দেশে ।” দুৰ্গার মুখে এবার একটু হাসি ফোটে। খুটিয়া খুটিয়া সে শ্ৰীপতির সব খবর জানিয়া নেয়—সে কত রোজগার করে এই খবরটা পৰ্য্যন্ত ! শ্ৰীপতি বুঝিতে পারে দুর্গা তাকে সরল হৃদয় বোকাসোকা গেয়ে লোক বলিয়া ধরিয়া নিয়াই এত কথা জিজ্ঞাসা করিতেছে—মনে মনে তার একটু রাগও হয়। কিন্তু দুৰ্গাও এমন সহজ সরল ভাবে প্রশ্ন করে যে প্রতিটি প্রশ্নের জবাব না দিয়া সে পারে না । সত্য কথাই যে সব বলে তা নয়। রোজগারের অঙ্কটা বাড়াইয়া প্ৰায় দ্বিগুণ করিয়া বলে। দুৰ্গা একটু হাসে। সন্ধ্যা বলিয়াছিল সহরে পাপ বেশী । তর্কের খাতিরে বলিয়াছিল । জগদানন্দ স্বীকার করে নাই। আরেকদিন ওই প্রসঙ্গে জগদানন্দ মোহনকে বলে, “সহরের বিরুদ্ধে বড় একটা অভিযোগ, সেখানে দুনীতি বেশী। খারাপ স্ত্রীলোকের সংখ্যা ধরে হিসেব করলে তাই মনে হয়। কত বড় স্কেলে কলকাতায় দেহ বেচার ব্যবসা চলে শুনলে আপনি চমকে যাবেন । মনে হবে সহরের একটি লোকেরও বুঝি চরিত্র ঠিক নেই। কিন্তু এই দুনীতির প্রথম আর প্রধান কারণ কি জানেন ? দারিদ্র্য। সপরিবারে যারা সহরে বাস করতে পারে না তাদের জন্যেই এই কুৎসিত ব্যবসাটা এত বাড়তে পেরেছে। শুধু পেটে খেয়ে তো মানুষ বঁাচে না। মোহনের নবপরিচিত প্ৰতিবেশী অসীম বলে, ‘কোয়াইট রাইট”। জগদানন্দ বলে, “সহরে যারা থাকে, কুলি মজুর থেকে ভদ্রলোক পৰ্য্যন্ত, আজি যদি তাদের সপরিবারে সহরে বাস করবার ক্ষমতা হয়, অৰ্দ্ধেকের বেশী খারাপ স্ত্রীলোক কাল সহর ছেড়ে চলে যাবে।” \odo २७(c)