পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্রন্থাবলী অসীম বলে, “আপনার কথাটা একটু জড়িয়ে যাচ্ছে।” একটু থামিয়া সে জোর দিয়া বলে, “একটু ভুল বললেন। ও রকম হলে সহরের অৰ্দ্ধেক খারাপ স্ত্রীলোক সহর ছেড়ে চলে যাবে-একথাটা ভুলও বটে বলা অন্যায় বটে। মানেটা দাড়ায় যে সহরের দুনীতির জন্য। ওরাই যেন দায়ী ! ভাত কাপড়ের উপায় থাকলে ওরাও কি নিজেদের দুনীতির শিকার হতে দিত ? সহরের সব মানুষের সপরিবারে সচ্ছলভাবে সহরে বাস করার ক্ষমতা হওয়া মানেই তো এখনকার অবস্থাটা একেবারে বদলে যাওয়া। ওরকম অবস্থায় মেয়েদেরও দেহ বিক্রি করার দরকার থাকবে না ।” জগদানন্দ খুশী হইয়া সায় দেয়, বলে, “খারাপ স্ত্রীলোক আমি ঠিক ওই অর্থে বলিনি। বাধ্য হয়ে খারাপ পেশা নিতে হয়েছে, এই অর্থেই বলেছি। এরকম পেশা নিয়ে সহরের পয়সায় ভাগ বসাবার দরকার হবে না।--সহরের একদিন সেরকম অবস্থা আসবে বৈ কি । সহরের নিন্দে করে অনেকেই, তলিয়ে কোন কথাই কেউ তো ভেবে দ্যাখে না।” “আপনি সহরকে খুব ভালবাসেন মনে হচ্ছে।” “তা বাসি। সহর আমার কাছে উন্নতি, প্ৰগতি, শ্ৰীবৃদ্ধির প্রতীক। কারো সখে সহর গড়ে ওঠে না, কেবল আরামে থাকা আর মজা লুটবার জন্য সহর নয়। শিল্প, বাণিজ্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি সব কিছুর হেড কোয়ার্টার হল সহর। সহর দেখে দেশকে চেনা যায়, দেশের অবস্থা বুঝতে পারা যায়।” অসীম তার শেষ কথাটা স্বীকার করে না । ‘অন্য দেশে স্বাধীন দেশে তা হতে পারে, আমাদের এদেশে বোধ হয় সহর দেখে দেশ সম্বন্ধে উণ্টো ধারণাই জন্মে। আপনি কি বলতে চান, কলকাতার রাজপ্ৰাসাদের মত বাড়ী, পিচঢালা রাস্তা, দামী মোটরগাড়ীর স্রোত, এসব দেখে কেউ কল্পনা করতে পারবে এদেশের লোক কি অবস্থায় দিন কাটায় ? কলকাতা দেখে কেউ ভাবতে পারবে কত গরীব এদেশের মানুষ, খেতে পরতে পায় না, লেখাপড়া জানে না, অসুখে ভুগে মরে ?” জগদানন্দ জোর দিয়া বলে, “নিশ্চয় পারবে। যে কোন দেশ হোক, সহর দেখে দেশের অবস্থা বোঝা যাবেই। জাহাজ থেকে নেমে গ্র্যাণ্ড হোটেলে উঠে। মার্কেট একটা চক্র দিয়ে কেউ যদি ভাবে এই কলকাত সহর, সে অবশ্য পারবে না। সমস্ত সহরটা ষে দেখবে তাকে আর বলে দিতে হবে না কিসের মানে কি W Gt 8