পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা লাবণ্য একদিন তাকে ডাকিয়া পাঠাইল। এক বাড়ীতে থাকিয়াও এক মাসের উপর লাবণ্যকে সে চোখেও দ্যাখে নাই। লাবণ্য নিজেই তাকে ডাকিয়া না পাঠাইলে আরও কয়েক মাসের মধ্যে হয় তো একটিবার তার মনেও পড়িত না যে এ বাড়ীতে লাবণ্য বলিয়া কেহ আছে। লাবণ্য তাকে খাতির করিয়া বসিতে বলে। তারই জন্য যে চেয়ারটা আগেই এ ঘরে আনিয়া রাখা হইয়াছিল, সেই চেয়ারে বসিতে বলে। এবং পীতাম্বর ও দ্বিধামাত্র না করিযা ধীরে সুস্থে সেই চেয়ারে বসিয়া জিজ্ঞাসা করে, “কেমন আছ মা ? ‘সহরে এসে শরীরটা টিকিছে না ।” পীতাম্বর চুপ করিয়া থাকে। তারপর লাবণ্য তাকে ডাকিয়া অনিয়া খাতির করিয়া ঘরে বসানোর আসল কথাটা বলে । “আপনি তো টোটকা জানেন অনেক রকম, অনেককে সারিয়ে দিয়েছেন । আমায় দিন না একটা কিছু ? জোরালো চিকিৎসা আরম্ভ করার পর লবণ্যের অসুখ বাড়িয়াছে। কদিন বিছানায় পড়িয়া থাকে। সে হিসাবের বদলে এখন সে হিসাব রাখে। কদিন সে উঠিয়া হাটিয়া বেড়ায় । আরেকটু সে রোগা আর বিবৰ্ণ হইয়া গিয়াছে। তবু তাতেই যেন লাবণ্য তার বাড়িয়া গিয়াছে। গীতিকাব্যের ছাকা অনুভূতির প্ৰলেপ যেন পড়িয়াছে তার রূপে, দেখিলে আরও মুদু আরো মোলায়েম প্ৰত্যানুভূতি জাগে। এ ধরনের নিম্প্রভ মায়াবোধ্য রূপ দেখার চোখ অর্থাৎ মানসিক প্ৰস্তুতি যাদের আছে তারা বিশেষভাবে লাবণ্যকে আজ কাল দ্যাখে, নিশ্বাসের ঘষায় লাবণ্যের নাকের আর ঠোঁটের ছাল উঠিয়া যাইবে ভাবিয়া শঙ্কিত হয় এবং এমন একটা উপভোগ্য মমতা জাগে বৌটির জন্য প্ৰত্যেক সহৃদয় মানুষের যার স্বাদ অনেকটা Cot(25 2\5 পীতাম্বর কিছুই অনুভব করে না, লাবণ্যের অস্তিত্ব তার কাছে হৃদয়ের স্বাদ গন্ধহীন হইয়া থাকে। মোহনের রুগ্ন। বৌটির জন্য সে কিছুমাত্র মমতা অনুভব করে না । VVN