পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৰ্পণ কৃষ্ণেন্দু চুপ করে গেল। মমতা এখন বুঝেও বুঝবে না। সে বুঝতে চায় না। আত্মবিরোধের আপোষ মীমাংসার শীৰ্ত্ত নিজে স্থির করে নিজেই সে গ্ৰহণ করেছে। এতদিনের সঞ্চিত চাপা আবেগ মুক্তির পথ পাবে। উৎসাহে উত্তেজনায় মমতা হঠাৎ টগবগিয়ে উঠেছে। , এদিকে রামপালের অস্থায়ী নেতৃত্ব ও দায়িত্বের অবসান ঘটে গেল । শ্ৰীপতির ঈর্ষা ও আশঙ্কার ফলে নয়, লোকনাথের সঙ্গে রামপালের আলোচনার ব্যৰ্থতায়। এসব ব্যাপারে রামপাল যে নেহাৎ কঁচা, নেহাৎ ছেলেমানুষ এটা টের পেয়ে সকলে আস্থা হারিয়েছে । রাগ কেউ করেনি। অনেকে বরং তার সরলতা বনাম বোকামিতে বেশ খানিকটা কৌতুক বোধ করেছে। রামপালকে সকলে বারণ করে দিয়েছে সে যেন আর লোকনাথের কাছে দরবার করতে না যায়। অপমানে অভিমানে মাথা বিমঝিম করে উঠেছে। রামপালের। এ নিষ্ঠুর অবিচারের মানে সে বুঝতে পারে নি। একেবারে সুরু করা থেকে, সকলের হাতে উমাপদর খুন হয়ে যাওয়া নিবারণ করা থেকে, এ ব্যাপারটা সে নিয়ন্ত্রণ করে আসেনি এ পৰ্য্যন্ত ? একমাত্র সেই কি হাজতে যায় নি এ ব্যাপারে ? কেন তবে তাকে বাদ দেওয়া হবে ? যে কাজ সে আরম্ভ করেছে কেন তা শেষ করতে দেওয়া হবে না ? রামপাল অনুরোধ জানিয়েছে, আরেকবার তাকে সুযোগ দেওয়া হোক। কেউ কানে তোলে নি । রামপাল উত্তেজিত হয়ে প্ৰতিজ্ঞা করেছে লোকনাথকে পটাতে না পারলে সে বাড়ীর মধ্যে ঢুকে উমাপদকে মেরে আধমরা করে দশ বছর জেল খাটবে। তার আস্ফালনে কেউ বিশ্বাস করে নি, অনেকে টিটকারি দিয়েছে। শ্ৰীপতি তাকে জানিয়ে দিয়েছে, পরদিন কৃষ্ণেন্দু আসছে, যা করবার সেই করবে, রামপালের আর বাহাদুরী করবার দরকার নেই। সে কেরামতি দেখিয়েছে অনেক, আর না। দেখালেও চলবে। তখন রামপাল ক্রুদ্ধ ও বিমর্ষ হয়ে চুপ করে গেছে। খানিক পরে নীরবে উঠে চলে গেছে আসর ছেড়ে । শ্ৰীপতি ও গণি কৃষ্ণেন্দুদের আনতে স্টেশনে এসেছিল। দিনটা সুরু হয়েছে ৰাদলায়। কাঠগোলার কাছে মিন্ত্রী ও করাতিরা অপেক্ষা করছিল। স্টেশন থেকে সেখানে যাবার পথে ট্যাক্সিতে শ্ৰীপতি সব জানাল । তাকে প্রশ্ন করল মমতা। কৃষ্ণেন্দু প্ৰায় আগাগোড়াই নির্বিবকার ভাবে শুনে গেল। মমতা VO)