পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী দুর্গার পিছনে আব্ব একটি পয়সা খরচ করা চলিবে না। নিজের খরচ আরও কমাইতে হইবে –কোন রকমে শুধু বাচিয়া থাকার জন্য যা দরকার তার অতিরিক্ত সব কিছু ছাটিয়া ফেলিতে হইবে-বিড়ি খাওয়া পৰ্য্যন্ত । বোজগারের কি ব্যবস্থা করিবে ? হাতখন্তি দা” কুডুল গড়া ছাড়া কিছুই সে যে জানে না। জগদানন্দের দয়ায় কারখানায় কাজ পাইয়াছে, প্রথম দিকে কাজের কিছুই বুঝিত না, ক্রমে ক্ৰমে কাজ শিখিয়াছে। কারখানাতে কাজ না করিলে এ শিক্ষার কোন f নাই। জগদানন্দের খাতিরে প্রথম হইতেই ভাল মজুরিতে কাজ শুরু করিয়াছে। তাতে শেষ পৰ্য্যন্ত লাভ হয় নাই । কাজ শিখিলেও সহজে তার কাজ পাকা করা হইবে না, বেতন বাড়িবে না। কারখানায় কাজ না করিয়া অন্য কিছু সে যদি করিতে চায়, লোচিনেব মত ছোটখাট একটি নিজস্ব মেরামতি কারখানা খোলে, ফণীর মত ভাঙ্গা লোহালক্কড় কেনা বেচা করে,—টাকা কই তার ? টাকা ? দেশে এক বিঘা জমি আছে। দু’খানা ভাঙ্গ ঘর আছে। কদমের গায়ে একটু সোনা আছে। আর আছে। হাপর নেহাই হাতুড়ি সঁাড়াশীগুলি । ওসব বেচিয়া দিলে কিছু টাকা হয় না ? কাজের শেষে কারখানার বাহিরে আসিয়া খাটুনির চেয়ে দুশ্চিন্তায় শ্ৰীপতি বেশী শ্রান্তি বোধ করে । বিড়ি খাইতে বড় ইচ্ছা হয়। বিড়ি সে কেনে নাই, দু’টি একটি চাহিয়া খাইয়াছে। কিনিবে না করিতে করিতে এক পয়সার বিড়ি সে কিনিয়া বসে । শুধু একটি পয়সা । কি আসে যায় একটি পয়সতে ? বিশেষতঃ আর কোনদিন যখন কিনিবে না, আজই তার শেষ বিড়ি কিনিয়া খাওয়া। বিড়ি না খাইয়া একটা পয়সা বাঁচানো আরম্ভ করা একটা দিন শুধু পিছাইয়া গেল । মোটে একদিন । দুৰ্গার সঙ্গে একবার দেখা করিয়া আসিবে কি ? শেষ দেখা ? দুৰ্গার সঙ্গে সম্পর্ক তুলিয়া দেওয়াও একটা দিন পিছাইয়া দিলে খুব বেশী কি আসিয়া যাইবে ? \9ዓ 8