পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা শুধু পাচীর ঘরে গিয়া মাতলামির লীলাখেলা করার ঝোকটার জন্য সে তাকে চাকররূপী দেবতা বলিয়া মানিতে পারে নাই। এখন সে টের পাইয়া গিয়াছে যে জ্যোতির দৌড় বস্তির ওই সস্তা পাচী। পৰ্য্যন্তই। বয়স কম, চেহারায় জলুষ আছে, চাকরের কাজে ঢুকিয়া দু’একটা বাড়ীতে দু’একটা কেলেঙ্কারী হয় তো করিয়া থাকিতে পারে—একধার হইতে ভদ্রঘরের বালিকা তরুণী বয়স্ক নারীর হৃদয়রাজ্য জয় করিবার উদ্ভট উৎকট কাহিনীগুলি সবই তার বানানো । নিজের মনের বিকারকে খাতির করিবার জন্য বানানো । তার মত গেয়ে সবল মানুষকে শ্রোতা হিসাবে না পাইলে তাই তার মিথ্যা গল্প বলার রস জমে না। হাতে পয়স। থাকিলে সে পাচীদের ঘরে গিয়া মাতলামি আর হল্লার লীলাখেলা করে, পয়সা না থাকিলে মন-মরা হইয়া তাকে উৎকট বীভৎস রসে রসাইয়া রসাইয়। গল্প বলিয়া নিজের বিকারকে সামলানোর চেষ্টা করে । শুনিতে শুনিতে বিচলিত অভিভূত হইয়া যাইত ভাবিলে এখন শ্ৰীপতির নিজের গ্রাম্যতায় অজ্ঞতায় লজা বোধ হয়, হাসি পায় । একটা গেয়ে বৌ কদমের তাল সামলাইতে তার প্রাণান্ত হয়, দুৰ্গাকে পৰ্য্যন্ত ছাটিয়া ফেলিতে হয়-মোহনের পেয়ারের চাকর বলিয়া এবং চেহারায় একটু জলুষ আছে বলিয়া জ্যোতির বেলা যেন প্ৰেম করিতে গেলে দায় ঘাড়ে করার নিয়মটা বাতিল হইয়া যাইবে । কদম পৰ্য্যন্ত তাকে এতটুকু রেহাই দেয় না, সহরের চালাক চতুর মেয়েরা যেন কদমের চেয়ে বোকা । p গ্রামে থাকিতে শ্ৰীপতি বিশ্বাস করিত, দাম দিয়া পীরিত হয় না। এখন সে জানিয়া গিয়াছে পীরিত করার দামও পুরুষকে দিতে হয় ! জানিয়া কত দিক দিয়া যে সে স্বস্তি বোধ করিয়াছে ! ভূপালও তাকে নানারকম গল্প শোনায়-শ্রমিকের লড়াই হইতে সহরের জীবন ও ঘটনা হইতে কেচ্ছা পৰ্যন্ত অনেক বিচিত্ৰ কাহিনী। তার কেচ্ছা! জ্যোতির নিজের বাহাদুরীর বানানো কাহিনীর চেয়ে কম অশ্লীল হয় নাকারণ, শুনিলেই বুঝা যায় অন্যের ব্যাপার হইলেও ভুপাল বানাইয়া বলিতেছে না, হয় তো খানিকটা রং চড়াইয়াছে। VOCry