পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা নগেন সোল্লাসে বলে, “জোরে চালাও মদন, আরও জোরে।” ঝরণা ধমক দেয়, "না, স্পিড কমাও । অ্যাকসিডেণ্ট ঘটবে নাকি ?’ মদনের কাছে সব কথা শুনিয়াও নগেনকে মোহন কিছু বলে না। ‘কাল গাড়ী নিয়ে যে ও না। নগেন, আমার একটু দরকার আছে,”-এই অনুরোধ জানাইতে পৰ্য্যন্ত তার সাহস হয় না । মারি শিক্ষায় হোক আৱ ঝরণায় প্ররোচনায় হোক, তার বিনানুমতিতে নগেনের গাড়ী দখল করার মানেটা স্পষ্ট । বাপের টাকায় গাড়ী কেনা হইয়াছে, গাড়ী ব্যবহার করার সমান অধিকার নগেনের আছে বৈকি। যুক্তিসঙ্গত অধিকার, আইনসঙ্গত অধিকার, আত্মীয়স্বজনের সমৰ্থিত অধিকার । নিজের ভীরু তাকে স্বীকার করিতে হওয়ায় এসব সহ করা আরও কঠিন হইয়া পড়িয়াছে। মোহন জানে এভাবে চলিতে পারে না, পারিবারিক জীবনে তার যে ভাঙ্গন ধরিয়াছে তাকে আর টেকানো চলে না, একদিন এ জীবন ভাঙ্গিয়া চুরমার হইয়া যাইবেই এবং তার বেশী দেরী নাই। তবু সে প্ৰাণপণে সংঘর্ষ এড়াইয়া চলে, শেষ বুঝাপড়ার দিনটা যতদিন পারে পিছাইয়া দিতে চায়, মিথ্যা। আশায় নিজেকে ভুলাইতে চেষ্টা করে। টাকা চাই, টাকা । টাকা আনিতে পারিলেই আবার সব ঠিক হইয়া যাইবে। কোন রকমে যদি এই অশান্তি আর অপমানের জ্বালা সহ্য করিয়া সে আর কিছুদিন সংসারে এই শোচনীয় অবস্থাকে ও বজায় রাখিয়া চলিতে পারে এবং সেই অবসরে উপাজনের ব্যবস্থা করিয়া ফেলে, সব গোলমাল মিটিয়া যাইবে। পরিকল্পনা তো তার অনেক আগে হইতেই ঠিক করা আছে, এখন সেটা কাজে লাগাইয়া দিলেই হইল। কিন্তু এসব চিন্তার ফাকি কোথায় মোহন জানে। একটা যে মৃদু আতঙ্ক সর্বদা তার হৃদয়কে অ্যাকড়াইয়া ধরিয়া থাকে, সেটাই তার প্রমাণ । তার পরিকল্পনাগুলি চমৎকার, অবাস্তব স্বপ্নও সেগুলি নয়, কারণ বাছিয়া বাছিয়া রূঢ় বাস্তবতার অনেক খুঁটিনাটি অনেক বাধাবিপত্তির চিন্তাকেও তার মধ্যে স্থান দেওয়া হইয়াছে, তবু সেগুলি কাজে লাগিবে না। ওসব পরিকল্পনার প্রচুর Vos