পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

टश२क আশা যে কেন এমন হয়ে গেল কে জানে। মাঝখানে একবার প্রসাদের নিরুত্তেজ উৎসাহহীন জীবনে একটু সাড়া এসেছিল। সখা হয়েছিল, বিয়ে করবে। কাকে বিয়ে করতে দেখে, কার কাছে নববধূকে শয্যাপার্শ্বে পাওয়ার রোমাঞ্চকর বর্ণনা শুনে অথবা কার সুখশান্তি-ভরা দাম্পত্য জীবনকে হিংসা করে ইচ্ছাটা তার জেগেছিল বলা যায় না। রাত জেগে সে কামনা করতে লাগল ভীরু লাজুক কিশোরী একটি বীেকে এবং কল্পনায় তাকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলতে আরম্ভ করল তার নিজস্ব জমকালো পারিবারিক জীবন। কমবয়সী, কুমারী, বোকাটে ধরনের এবং অত্যন্ত নাম প্ৰকৃতির যে-কোনো ঘরোয় মেয়ে হলেই তার চলত। কিন্তু তার জন্য যে-কোনো মেয়েই বা কে খুজে দিচ্ছে। জানাশোনার মধ্যে নিজের জন্য নিজেকেই তার একটি পাত্রী ঠিক করতে হল। মেয়ের বাপ গরীব, মেয়েটি চলনসই, সুতরাং সুলভ। তিন দিনের চেষ্টায় অনেক ভণিতার পর মেয়ের বাপের কাছে ইচ্ছাটা সে প্ৰকাশ করতে পারল । মেয়ের বাপ কৃতাৰ্থ হয়ে বলল, “সে তো আমাদের ভাগ্যি ।” তাকে দিয়েই প্ৰসাদ আবেদন পাঠালে ভূষণের কাছে। ভূষণ উদারভাবে বলল, “তা করুক না বিয়ে, বিয়ে করবে তাতে আর হয়েছে কি ?” দুপুরবেলা তাকে ঘরে ডাকিয়ে সোহাগের কৌতুকে আশা বলল, “তুমি নাকি বিয়ে করবে ? মাগো মা, কোথায় যাব !” সলজ্জভাবে একটু হাসলেও প্ৰসাদ মুখ নিচু করল না। আশাকে দেখতে দেখতে গভীর স্বস্তি বোধের সঙ্গে তার মনে হতে লাগল, তার বৌ এরকম হবে না, সুন্দর রোগ প্যাটক৷ চেহারা তার বৌ-হবু মেয়েটার। তারপর কোথা থেকে আশার ছোট ছোট কটা চোখে ঈৰ্ষার বিহবলত ঘনিয়ে এল। ভূষণের তুলনায় এ-লোকটা যে একেবারে পৃথক, সম্পূর্ণ অন্যরকম, এই সহজতম সত্যটা বােধ হয় তার খেয়াল হল এতদিনে। অবহেলার সঙ্গে কথা কওয়া যায়, চোখ রাঙালে ভয়ে কঁাপিতে থাকে, মিষ্টি কথায় আহিলাদে গলে যায়, হাসানো বা কঁাদানো চলে ছোট ছেলের মতো, ইচ্ছা-খুশিতে আকাশে তুলে আছড়ান চলে মাটিতে। তাছাড়া, তুচ্ছ আর নগণ্য বলে কত সহজে ওর কাছে নিলাজ হওয়া যায়, যেচে ভাব করতে বাধে না, ভয় বা ভাবনার প্রয়োজন থাকে না। ওর বিচারের মূল্য কতটুকু। মন্দ ভাবুক, অসতী ভাবুক, কে কেয়ার করে ওর ভাবা না-ভাবাকে ! 8 o\)