পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী যাবে। কয়েক মুহুর্ত দুহাতে সে মাটি অ্যাকড়ে ধরে রইল। তারপর উঠে দাড়ানাে মাত্র বাতাসের ধাক্কায় মাটিতে পড়ে গেল। ঝড় তাকে উঠে। ফাকায় সবে যেতে দেবে না, এইখানে তাকে ফেলে রেখে যতক্ষণ পারে খেলা করবে তাকে নিয়ে, তারপর গাছ চাপা দিয়ে মেরে ফেলবে। মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়ার সাহস প্ৰসাদের কোনোদিন হয়নি। ক্রুদ্ধ প্ৰকৃতির স্পষ্ট ও নিষ্ঠুর নির্দেশ মেনে নিয়ে এখানে পডে থাকবে কি না ভেবে কিছুক্ষণ সে সত্যসত্যই নিম্পন্দ হয়ে পড়ে রইল। কিন্তু বাঁচবার প্রেরণা মানুষের সক্রিয় হয়ে উঠলে কোটি বছরের অভ্যাসকেও স্বীকার করে না। আবার সে সাবধানে উঠে দাঁড়াল। চলতে আরম্ভ করে ভয়ের পরিবর্তে ভাবনায় তার বুকটা ধড়াস-ধড়াস করতে লাগল। রূপকথার মায়াকাননের চেয়ে ভয়াবহ এই গাছের রাজ্য পার হতে পারলেই খোলা মাঠ, সেখানে গিয়ে পৌছতে পারলে নিরস্ত্র ঝড় তার কিছু করতে পারবে না । ফাকায় গিয়ে পৌছতে পারবে কিনা ভেবে উৎকণ্ঠায় বারবার তার শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসতে লাগিল । শেষ গাছটি পার হবার আগেই তার চোখে পড়ল আলো । হেডলাইট জালিয়ে রেললাইনে ট্রেন দাড়িয়ে আছে। একসঙ্গে প্ৰবল হাসিকান্নার আবেগে প্ৰসাদের দেহ যেন অবশ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ সে নডেতে পারল না । তারপর উধ্বশ্বাসে ছুটতে আরম্ভ করেই অগভীর একটা খাদে গড়িয়ে পড়ল। এতটুকু তার দুঃখ হল না, আঘাতের বেদনাও অনুভব করল না । নিজের সঙ্গে সে যেন তামাসা করছে এমনি ভাবে গোঙিয়ে গোঙিয়ে সে হাসতে লাগল, গা বাড়া দিযে উঠবার আগে সস্নেহ পরিহাসের ভঙ্গিতে ঠাস ঠাস করে নিজের গালে কয়েকটা চড় বসিয়ে বলল, 'ধুত্তোর নিকুচি করেছে, ছুটতে গেলি কেন ? হামা দিয়ে খাদের গা বেয়ে উঠে সোজা হয়ে দাড়িয়েই আবার ট্রেনের আলোর দিকে প্ৰাণপণে ছুটিতে আরম্ভ করল। প্ৰকাণ্ড একটা গাছ ভেঙ্গে পড়ে লাইন বন্ধ হয়ে গেছে। একটি থার্ড ক্লাস কামরার দরজা খুলে ভিতরে ঢুকেই প্ৰসাদ মরমে মরে গেল। একগাড়ি লোক হা করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। জামা কাপড় তার কাদা আর রক্তে মাখামাখি হয়ে গেছে, না-জানি কী ভাবছে সকলে তাকে দেখে! কামরার দরজাজানাল সব বন্ধ, ভিতরে অসহ্যু ভ্যাপিস গরম ৷ প্ৰসাদের দম আটকে আসবার উপক্রম হল। তাড়াতাড়ি অপর দিকের দরজা খুলে সে লাইনে নেমে গেল। 8 o Ve