পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভয়ংকর বাড়িতে পৌছানোমাত্ৰ ভূষণ জিজ্ঞাসা করল, “টাকা পৌছে দিয়েছিস ? “regis N | ' ভূষণ কটমট করে তার দিকে তাকাল। হাত বাড়িয়ে বলল, “দে।” এক পকেটে ন্যাকড়া বাধা জাম ছিল, অন্য পকেটে ভূষণের রুমালে বাধা সাতশো’ তেইশ টাকা । জামগুলি ছেচে গেছে, রুমাল শুদ্ধ টাকাগুলি কখন কোথায় পড়ে গেছে ভগবান জানেন । পেনের মাঠেই কোথাও পড়েছে, সে যখন আছাড় খাচ্ছিল অথবা খাদের মধ্যে গড়িয়ে পড়ছিল। থাবা উচিয়ে ভূষণ তার দিকে এগিয়ে আসে, ভয়ে বিস্ময়ে বিস্ফারিত চােখে প্ৰসাদ তার দিকে তাকিয়ে কঁাপিতে আরম্ভ করে দেয়। সে ভদ্রলোকের ছেলে, লেখাপড়া জানে, তার ত্রিশ বছর বয়স হয়েছে, ভূষণ তাকে মারবে! খালি পেটটা গুলিয়ে উঠে আবার তার বমি ঠেলে আসে । দাতে দাত চেপে ধরতে মাথার কঁপুনি শুরু হয়ে যাওয়ায় চোখের সামনে ভূষণের মস্ত গোলগাল মুখখানা পাশাপাশি দুদিকে লম্বী হয়ে যায়। কাছে এগিয়ে আসতে আরম্ভ করেই ভূষণের গতি কেমন অনিচ্ছুক ও মন্থর হয়ে পড়ে, খানিকটা তফাতে থেমে গিয়ে সে থাবা নামিয়ে নেয়। সজোরে ঝাকুনি দিয়ে তার মুখখানা দৃষ্টির ফোকাসে আনতে দাঁত খুলে গিয়ে প্ৰসাদের মুখখানা ই হয়ে যায়। ভূষণ ভয় পেয়েছে! তাকে মারবার জন্য এগিয়ে এসে ভূষণের ভয় হয়েছে! ‘পেনোর মাঠে খুজিলে পাওয়া যাবে।” "পাওয়া যায় ভালোই, নইলে তোকে পুলিশে দেব।” ভূষণের ধর্মকে ঝাঝি নেই, এ যেন শুধু কথার কথা । ঝড়ের সঙ্গে লড়াই করে এসে প্ৰসাদের মৃতি হয়েছে ভীতিকর, তার লাল চোখের ভয়ার্ত চাউনি দেখে বুক কেঁপে ওঠে। আশার সখের আলমারিতে বসানো প্ৰকাণ্ড আয়নায় প্ৰসাদ নিজেকে দেখতে পাচ্ছিল। ভূষণ ভয় পেয়েছে, তাকে দেখে ভয় পেয়েছে, অনুমান করে প্রথমে তার বিস্ময়ের সীমা রইল না। তারপর ধীরে ধীরে জাগল উল্লাস, নিজেকে ভূত সাজিয়ে গুরুজনকে আঁতকে উঠতে দেখলে ছোট ছেলের যেমন উল্লাস জাগে সেইরকম, কিন্তু ঢের বেশী প্ৰচণ্ড ও উৎকট । তার মধ্যেও মাথাটা আশ্চৰ্যরকম ঠাণ্ড মনে হয়। ধীরে সুস্থে সব যেন সে হিসাব করতে পারছে, বুঝতে পারছে, ভুল হবার ভয় নেই। সে টের পাচ্ছে 8 O