পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Vs বললেন, ‘এসো মা বোসে ।” কৃষ্ণেন্দুকে বললেন, “কেষ্টবাবু যে !” দমক মারা ভঙ্গিতে মুখ তুলে ছেলের দিকে একনজর তাকিয়ে সামনের দেয়ালে সম্রাজ্ঞী ভিক্টোরিয়া অথবা তার পাশে সম্রাট এডওয়ার্ডকে সম্বোধন করে বললেন, ‘হঠাৎ কোথায় চলে যাও, বলেও যাও না একবার যাবার আগে।” ‘বাড়ীতে সবাই জানে। আপনাকে বলেনি ?” “আঁ ? লোকনাথ গড়গড়ার নিলে একটি মাত্র টান দিলেন, হঁ্যা, বলেছে বৈকি। চলে যাবার পরে শুনলাম । আমায় জানিয়ে যাবার কথা বলছিলাম । দরকারী কথা থাকে, পরামর্শ থাকে। বড় হয়েছ, দায়িত্ব গ্ৰহণ করছ, সব তো বুঝে শুনে নিতে হবে তোমাকেই ! আমি আর কদিন ? আরেকবার নিলে টান দিলেন, “যাক গে।” ধীর, স্থির, শান্ত, গম্ভীর, উদার, মহৎ, আত্মপ্ৰতিষ্ঠ মানুষ, কুটিল, সাবধানী ও হিংস্র । এতগুলি বিভিন্ন প্ৰকৃতির সমবেত ওজন এক আয়ত করে যেন লোকনাথ ভারিব্ধি হয়েছেন। আধহাত উচু চৌকীতে বিছানো ফরাসের এককোণে হীরেনকে মাথা নীচু করে সন্তৰ্পণে বসতে দেখে মমতার বুকটা একবার ধাড়াসা করে ওঠে, মনে হয় কোন আশা নেই, সব ভুল। ঘরের সাজসজ্জা ও আসবাব পত্র সমস্তই যেন লোকনাথের পক্ষ নিয়ে নি:শব্দ মাহীত্বেগ্ন্য তাদের দমন করতে চায়। প্ৰকাণ্ড ঘরে বসবার ব্যবস্থা দু'রকম । ভিতরের দিকের দেওয়াল ছুয়ে একপ্ৰান্ত থেকে আরেক প্ৰান্ত পৰ্য্যন্ত মস্ত ফরাস। ঘরের মাঝামাঝি বিরাট এক টেবিল, তার চওড়া প্ৰান্তের একদিকে লোকনাথের নিজস্ব গদি আঁটা একটি এবং বাকী তিনদিকে গন্দিহীন গোটা দশেক চেয়ার। দেয়াল ঘেষে তিনটি সোফা। আসবাবগুলি সব লোকনাথের কারখানায় তৈরী কিন্তু আশ্চৰ্য্য রকম সাদাসিধে, মোটা এবং ভারী। মমতার আশঙ্কা বাতিল হয়ে যেতে কিন্তু বেশী দেরী হল না । সে যে প্রমাণ দেখাবে বলেছিল। আসল কথা আরম্ভ হবার দশ মিনিটের মধ্যে সে প্ৰমাণ সাংঘাতিক রূপ ধারণ করে বসল। হীরেন ও লোকনাথের মধ্যে এমন সংঘর্ষ বাধল। যে মনে হল বাপ ব্যাটায় বুঝি চিরদিনের জন্য বিচ্ছেদ হয়ে যায়। বাইরে তখন বিস্তুর ঝির করে বৃষ্টি পড়ছে। জানালার সাসিতে আওয়াজ হচ্ছে চিড়ে ভাজার। লোকনাথ ফরাসে তাকিয়ায় হেলান দিয়ে গড়গড়ার নল টানছিলেন, গরম হতে হতে নিজের অজান্তেই সরতে সরতে কখন ফরাসের