পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধনজন যৌবন রাজগঞ্জে মুমতি তখন বালিশের তলা থেকে নির্মলেন্দুর দামী রুমালটি বার করে নাকের সামনে নাড়ছিল। সুগন্ধ অনেকটা উপে গেছে । মনের গৰ্ব তার একবিন্দু কমেনি। এ-জগতে তার তুলনা নেই। রাজাকে জয় করেছে, কে বলে সে রাজকন্যা নয় ? কলকাতার বাড়িতে মা-বোনের থাকে, আর থাকে আত্মীয়-স্বজন । তারা স্নেহযত্ন আত্মীয়তা তোষামোদ দেয় অজস্র। নির্মলেন্দু কৃতজ্ঞচিত্তে সব গ্রহণ করে, আশ্রিত ও লিন্স,দের মন জোগানাের সন্তা চেষ্টা পর্যন্ত। মানুষের মনের মাধুর্যের ঐশ্বৰ্য তাকে মুগ্ধ করে দেয়। সে জুড়িয়ে যায়। সিনিকের অবস্থা সে পার হয়ে গেছে অনেক দিন, দাম কাষতে আর সে ভুল করে না। চার বছরের বেকার জীবন ধীরেনকে হিসেব ভুলিয়ে দিয়েছে, বাড়ি থেকে চিঠি এলে যে-ভূলের জন্য আজ তার মুখের তীব্ৰ জ্বালাভরা হাসি ফুটে ওঠে। মাসে মাসে টাকা পাঠিয়ে কিনতে হয় বলে এসব চিঠির যেন দাম নেই। টাকা দিয়ে আরাম যদি মানুষ কিনতে পারে, স্নেহ কিনতে এত বিতৃষ্ণা জাগে কেন ? নির্মলেন্দু বলে, “যা আছে আছে, যা নেই নেই। না জেনে যা পেয়ে কৃতাৰ্থ হয়ে যেতে, স্বরূপটা জানামাত্র বিগড়ে যাবে কেন ? তোমরা, সিনিকেরা গণ্ডমূখ । মাধবী সম্পর্কে তার নিজের উদাহরণটা অনেকবার উল্লেখ করতে গিয়ে চুপ করে গেছে। তার টাকায় স্থায়ী অধিকারের লোভে মাধবী ধরা দেয় না, তপস্যা করার মতো তাকে ভুলানোর, আরও ভুলানোর, অভিনয় করে। দুদিনের জন্য শুধু তার বিরক্তি এসেছিল, আজ লোভী মাধবীর ছলাকলা আগের মতোই তার চোখে দুপুর বেলার রোদকে জ্যোৎস্না করে দেয়, রক্তে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই রীতি মাধবীর ভালোবাসার। অন্য রীতিতে মাধবী ভালোবাসুক, এ-কথা ভাবাও কি বোকামি নয় ? মাসীমা বলে, “বড় রোগ হয়ে গেছিস বাবা, আমোর মাথা খাস একটু তাকা শরীরের দিকে।’ পিসীমা বলে, “কালীঘাটে তোর নামে একটা মানত করেছি, কাল একবারটি নিয়ে চ আমায়, পূজো দিয়ে মন্দিরে দাড়িয়েই প্ৰসাদী ফুল কপালে ছোয়াব।” আরও অনেকে অনেক কথা বলে। মালীর ছেলে নন্ত ডাক্তারী পড়বে। পিসীর মেয়ে নলিনীর বিয়ে সামনের মাসে। আরও অনেকে অনেক উদ্দেশ্য রাখে । 8RGt