পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী “সব জেগে আছে। কেউ যদি বাইরে আসে ?” “আসুক। কি আর হবে, জানবে। আমি ডরাই না ।” তারপর নিশ্বাস বন্ধ করে : “আমায় তোমার পছন্দ হয় ? সত্যি পছন্দ হয় ? দেব গো দেব, টাকা তোমায় দেব, মাইনের তিনগুণ টাকা দেব। আগে বলে না, কেমন ধারা পছন্দ হয় আমাকে ? একটুখানি ? তার চেয়ে বেশি ? খুব বেশি ?” এক মাসের মধ্যে সব ভোতা হয়ে গিয়েছিল, মনিব-কন্যা যদিও রাজকন্যারই স্তরের, তবু আর ভালো লাগত না। সময়মতো বেলারানীর বিয়ে না হলো গগন হয়তো নিজে থেকেই চাকরি ছেড়ে পালাত । ভোজের আগের দিন রাত্রেই গগন হাত খুনীতি’ নিয়ে শশধরের বাড়ীতে হাজির হল। শেষরাত্রে চুলোয় আগুন পড়বে। সহকারী দুজনকে তার সঙ্গে আনা উচিত ছিল, কতগুলি অকথ্য যুক্তি দেখিয়ে তাদের সে আড-বাসাতেই রেখে এসেছে। রাত তিনটেয় পঞ্চ ও কানাইকে হেঁটে এতদূর আসতে হবে ; দেরি তারা করবে। সন্দেহ নেই। বাড়ীর সকলে অসন্তুষ্ট হল, বেলারানী পর্যন্ত । “তোমার কাণ্ডজ্ঞান নেই। গগন ।” “আমি থাকতে ভাবিছ দিদিমণি ?” আত্মীয় পরিজন এসে পড়েছে, বাড়ি আজ রাত্রেই সরগরম। বারান্দার একদিকে সাতটি বঁটি পেতে সাতজন স্ত্রীলোক তরকারি কুটছে, ঘিরে বসে আছে আরও পাঁচ সাত জন ; তাদের আলাপ আলোচনায় সেখান থেকে উঠছে হাটবাজারের কলরব । বালিশ আর সতরঞ্চির বিছানা বগলে নিজের আগেকার শোবার কুটরিতে গিয়ে গগন দেখল, সেখানে চৌকি পেতে শশধরের নিজের লোকের শোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিছানার পুটলি নামিয়ে রেখে বেলারানীর খোজে। সে দোতলায় গেল। অন্য সব ঘরে গাদাগাদি করে মানুষ ঘুমুবে, শুধু বেলারানীর ঘরটি বাদ পড়েছে। জামাই এসেছে অনেক দিন পরে, মন্ত ঘরের একপাশে খাটের বিছানা শুধু সে আর বেলারানীর জন্য। খোকা ঘুমিয়ে আছে মেঝেতে, লাল মশারির নিচে । “আমি কোথায় শোব দিদিমণি ?” “তাও আমাকে বলে দিতে হবে? যেখানে জায়গা পাবে শোবে যাও বাপু, আজ রাতে আর আরাম করে শোয় না।” 3WV)