পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

CN3 নীরদ ঘোষাল এককালে বড় অত্যাচারী ছিল। প্রচুর মদ খেত কিন্তু মাতাল নিয়ে যাদের কারবার সে সব স্ত্রীলোক তার পছন্দ হত না । ভালো অবস্থায়, মত্ত অবস্থায় এ জগতে তার কাছে একমাত্র স্ত্রীলোক ছিল তার স্ত্রী। এ নিয়ে সে রীতিমত গর্ব অনুভব করত। মাতাল কিন্তু চরিত্রহীন নয়, এমন মানুষ কটা আছে এ জগতে । প্রায়ই মাঝরাত্রে অনুরূপার চাপা কান্নার গোঙানি ও হঠাৎ বাতাস-চেরা তীক্ষ্ম আৰ্তনাদ শুনতে শুনতে প্ৰতিবেশীদের অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। বেশি রাত্রে নীরদ বাড়ি ফিরেছে টের পেলে পাশের বাড়ির মেয়েপুরুষ কান পেতে থাকত। চোখের আড়ালে মাঝরাত্রির ওই মর্মান্তিক অভিনয় তাদের কল্পনায় এক ভয়াবহ রহস্য হয়ে উঠেছিল, অনুরূপার আতিগুলি তাদের সর্বাঙ্গে কেমন একটা অকথ্য অনুভূতির সাড়া জাগিয়ে তুলত: প্রত্যেকে নিজের মধ্যে অমানুর্ষিক নির্মমতার আনন্দ উপভোগ করত। বেশি পরিমাণে পচনশীল খাদ্য বাড়িতে এলে পাড়ায় বিলি করার প্রথা আছে। নীরদ যেন আশেপাশের কয়েকটা বাড়ীর ন্তিমিত নিস্তেজ একঘেয়ে জীবনে তার উৎকট উল্লাসের স্বাদ পাঠিয়ে দিত। সে-সব দিন গেছে। আপন থেকেই গেছে। নীরদ আর মদ খায় না । হৃদয় আর মনটা তার নরম হয়ে গেছে সত্য কিন্তু সেটা কাউকে মদ ছাড়তে সাহায্য করে না। মদের স্বাদটাই তার কাছে নষ্ট হয়ে গেছে। দেহযন্ত্র খারাপ হয়ে নয়, তার বিশাল দেহটা বরং আগের চেয়ে শক্তিশালীই হয়েছে এখন-মাথায় তার স্বাদ লাগে না। মদের। মদ খেলে কেমন সে শিথিল অবশ হয়ে যায়, সমস্ত শরীর থর থর করে কঁপে, মাথাটা সৰ্বক্ষণ আছড়ে পড়তে চায় বুকে। দুর্বল শীর্ণকায়া অনুরূপার সেবা আর সাহায্যই তখন শুধু তার প্রয়োজন হত। অথচ মদ না খেলে অনুরূপার প্যাঙাসে মুখখানা অত্যাচারে রক্তিম করে দেবার ক্ষমতা তার এখনও আছে। নীরদ একটা কৈফিয়ৎ দেয়।-শোনায় উপদেশের মতো ! 'ছেলেমেয়ে বড় হয়ে গেলে ওসব ছাড়তে হয়। পুরুষ মানুষকে।”