পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী জগত পড়ায়, চারুর মন পড়ে থাকে অন্দরে । ‘দাঁড়ান, আসছি’, বলে থেকে থেকে সে উঠে যায় বাপের খুঁটিনাটি সেবা করতে। দিন সাতেক চুপ করে থেকে জগত প্ৰতিবাদ করল । “পড়ার সময় বার বার উঠে গেলে চলবে না।” “বাবার কাজ করতে যাই।” “আর কেউ নেই বাড়িতে ? “আমি ছাড়া কেউ পারে না ।" শুনে জগত আশ্চর্য হয়ে যায়। কিন্তু অবস্থাটা মেনে নিতে রাজী श्श् ब्भा } জগতের মতো ছেলেদের আবার বিবেক বলে একটা মনোধৰ্ম থাকে, অনেক ভাবপ্রবণতা চাপা পড়ে যে বিকারটা সৃষ্টি হয় । সে তাই একদিন সোজা নীরদের কাছেই কথাটা পেড়ে বসে। । নীরদ ক্রুদ্ধ হয়ে বলে, “সে কি ! পড়ার সময় সংসারের কাজ করতে উঠে যায় ? ও তাহলে পাশ করবে কি করে ।” বহুদিন পরে অনুরূপ সেদিন ধমকের ধাক্কায় মাথা ঘোরা ও থর থর করে কঁপাবার অসুখে অসুস্থ হয়ে বিছানা নিল। নীরদ তবু গর্জে গর্জে শুনাতে লাগল, ‘জানি তোমার মতলব জানি। মেয়েকে তুমি ফেল করিয়ে বিয়ে দিয়ে বিদেয় করতে চাও। আমিও ভেবেছি কিনা ওকে এম-এ টেমে পর্যন্ত পড়ােব, শক্ৰতা না। করলে তোমার চলবে কেন ?" মেয়েকে ডেকে নীরদ বলে দিল, “আজ থেকে তুই সংসারের কোনো কাজ করবি নে, শুধু পড়াশোনা নিয়ে থাকিবি। ভাল করে পাশ করা চাই।” “তোমার যে কষ্ট হবে বাবা ? “বেণী পাকামি করিস নে চারু। কষ্ট হয় তো হবে।” চারু অগত্যা মনকে সরিয়ে নিল পড়াশোনার দিকে এবং তার ফলে গুরুর প্রতিও একটু মনোযোগ তাকে দিতে হল। প্রথমেই তার খেয়াল হল যে দুবেলা তিন ঘণ্টা তাকে যে পড়ায় তার গোলগাল নিরীহ ভালোমানুষী মুখখানা আর যাই হোক একটি সুনির্দিষ্ট মানুষের মুখ । তারপর সে টের পেল যে লোকটা বই পড়েছে। গাদা গাদা । তারও পরে সে নিজের কাছে স্বীকার করল যে লোকটা পড়াতে পারে অতি চমৎকার, পড়ানো শুনতে তার খুব ভালো লাগে। মেয়ের সেবা। আর নীরদ গ্ৰহণ করে না, যতক্ষণ পারে নিজের কাছে রেখে 888