পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী “আমার তাতে কি ? আমি চারুকে পড়াব-এখন বিয়ে দেব না।” “আজ্ঞে ও আর পড়তে চায় না ।” তার মেয়ে চারু, জগত আজ তাকে জানাতে এসেছে, চারু পড়তে চায় না ! রাগে নীরদের চোখে অন্ধকার ঘনিয়ে আসে, বুকের মধ্যে একটা অদ্ভুত যন্ত্রণা অনুভব করে। নিজের জানা ও বোঝা অখণ্ড যুক্তি-তর্ক রীতি-নীতি যদি মিথ্যা হয়ে যায়, জগতের কথাই যদি সত্য হয়ে দাড়ায় শেষ পর্যন্ত ! চারুর মতামত না জেনেই কি জগত তার কাছে এ প্ৰস্তাব করার সাহস পেয়েছে ? \ কিন্তু তার মেয়ে চারু, তার আবার মতামত । “তুমি আর এবাড়িতে এস না জগত।” জগৎকে তাড়িয়ে দিয়ে নীরদ একেবারে চুপ করে গেল। চারুকে কিছুই বলল না। ধমক হোক, উপদেশ হোক কিছু একটা শুনবার জন্য মেয়ে যে তার উৎসুক হয়ে আছে, বারংবার সেটা টের পেতে লাগল নীরদ। বুঝতে তার বাকী রইল না যে একবার কথাটা তুললেই চারু তার মনের কথা জানিয়ে দেবে এবং জানাবার জন্য সে ছটফট করছে। তবু মনটা তার প্রতিদিন বিগড়ে যেতে লাগল মেয়ের মুখে তার মা'র মুখের প্যাঙসেপনার আবির্ভাবের সুচনা দেখে। তবু নীরদ হল যেন ছাড়তে পারল না । মেয়েকে আরও বেশি কাছে রেখে, তাকে পড়িয়ে, গল্প শুনিয়ে, বেড়াতে নিয়ে গিয়ে, সিনেমা দেখিয়ে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে লাগল আগের অবস্থায়। কিন্তু কোনো দিক দিয়েই নাগাল সে যেন আর পেল না মেয়ের । সর্বদা কি যেন ভাবে তার মেয়ে, কোথায় যেন পড়ে থাকে তার মন। তার কাছে থেকেও কোথায় সে যেন থাকে, যেখানে তার যাওয়ার ক্ষমতা নেই। জগত চাকরি করতে চলে গিয়েছিল, মাস তিনেক পরে ছুটি নিয়ে ফিরে এল। আবার সে চেপে ধরল। নীরদকে । “আপনি যদি ওকে পড়াতে চান, পড়াবেন যতদূর খুশি । আমি আপত্তি করব না । কথাটি বলব না।” এবার নীরদ শুধু বলল, “হু”। অনুরূপ খবর দিল, চারু আর স্কুলে যাবে না বলছে। ‘কেন ? f "ও আর পড়বে না ।” ”88心