পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাহাড় বন নদী সাগর সব কিছু মনে পড়তে থাকে ? সাসি বন্ধ ঘরে তামাক ও সিগারেট পুড়ছে, রাস্তা নাক সিটকে বলল, “মাগো কি দুৰ্গন্ধ ! আমি রম্ভ, কেষ্টবাৰু। ঝুমুরিয়ার সেই বীরেশ্বর সামন্তের মেয়ে। সেই যে সেবারের "حـةtiة ‘ও, তুমি সেই রম্ভা ? কৃষ্ণেন্দু উঠে দুটি জানালার সার্সি খুলে দিল। চারবছর আগে সে বন্যায় রিলিফ কাজ করার জন্য ঝুমুরিয়া গিয়েছিল, ঝুমুরিয়ায় একটি কেন্দ্র খুলেছিল। বীরেশ্বর তাদের আদর করে ডেকে নিজের বাড়ীতে রেখেছিল, নিজে সপরিবারে এবং লোকজন জুটিয়ে রিলিফের কাজে তাদের সাহায্য করেছিল অনেক । বীরেশ্বরের বাড়ীতে ছোট একটা হাসপাতাল খোলা হয়েছিল। রম্ভ তখন কৰ্ম্মীদেব আর হাসপাতালের অসংখ্য খুটিনাটি প্রয়োজন মেটাতে সারাদিন ছুটোছুটি করত। তার অদ্ভুত উৎসাহ ও আগ্রহের কথা কৃষ্ণেন্দুর মনে আছে। আর মনে আছে তার একটি বিশেষ আবদারের কথা । নীলিমা হাসপাতালে কাজ করার সময় শাড়ীর ওপর একটি অ্যাপ্ৰাণ লাগিয়ে নিত। একদিন রম্ভ এসে চুপি চুপি কৃষ্ণেন্দুকে বলেছিল, আমায় এরকম একটা দেবেন, আমি আরো বেশী কাজ করব ? নীলিমার একটি অ্যাপ্ৰাণ পেয়ে খুশীতে ডগমগ হয়ে সে সেটিকে কোমরে বেঁধেছিল, কোচে সাফ করে শুকোতে দেওয়ার সময় ছাড়া বোধ হয় দিনরাত্রি কখনো সেটি সে খুলতো না, ঘুমোবার সময় পৰ্য্যন্ত সঙ্গে থাকত। রম্ভ তখন ছোট ছিল, অনেক ছোট । “তুমি খুব বেড়ে গেছ রাস্তা।” “বয়স হয় নি ? কৃষ্ণেন্দুর সঙ্গে পুরানো আলাপ ঝালাই করতে রম্ভ আসে নি, এসেছে রামপালের হয়ে কলহ করতে। মেঘলা ভোরে রূক্ষ্ম এলোমেলো চুল খোচা খোচা দাড়ি আর ক্রুদ্ধ গভীর মুখ ও রাতিজাগা চােখে উদভ্ৰান্ত দৃষ্টি নিয়ে রামপাল এসে হাজির হতে মনটা তার ছ্যাৎ করে উঠেছিল, ভয়ানক একটা কিছু ঘটেছে কিম্বা ঘটবে ভেবে। রামপালের কাছে সব শুনে তারও রাগের সীমা থাকে নি। একি অন্যায় লাঞ্ছনা একটা মানুষের ওপর, আকাশে তুলে মাটিতে আছড়ে ফেলা নিজের কৰ্ত্তালি বজায় রাখার জন্য ? নিজে এসে সব করবে বলে তার করে রামপালকে সকলের কাছে এভাবে অপদস্থ 8Գ