পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্রন্থাবলী তোমায় হাসপাতালে ফেলে রেখে আসব। জিদ করে মদ খাওয়াতে গিয়ে আমি বৌয়ের দাত ভেঙ্গে ফেলি না, কিন্তু আমিও নিষ্ঠর হতে জানি।” “এমনিতেই পাঁচ সাত দিন মোটে টিকিব। জোর করে তাড়াতে গেলে সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হবে।” পরাশর হার মেনে চুপ করল। কতদিন থেকে মৃত্যু নিশ্চিত জেনে ভূপতির কাছে ভয়-ডর দ্বিধা-সংকোচ লজ্জা-মান সব কিছু বাতিল হয়ে গেছে কে জানে! শিশু আর মুম্ষুর সঙ্গে কে লড়াই করবে ? এতক্ষণে পরাশরের নজরে পড়ল, ঠোঁটে আঙ্গুল ঠেকিয়ে প্রমীলা তাকে নিষেধ করছে, চােখ দিয়ে জল পড়ছে প্ৰমীলার । ভূপতি আবার চোখ বন্ধ করল। অস্ফুটম্বরে বলল, “একজন ডাক্তার ডাকাও ৷ তাড়াতাড়ি ডাক্তার ডাকাও একজন। আমায় বিছানায় শুইয়ে দাও । কটা দিন বাচিয়ে রাখা । মরতে দিও না ।” ব্যাকুলতায় পাগলের মতো হয়ে প্রমীলা বলল, “শিগগির যাও, ডাক্তারবাবুকে ডেকে আনো । কী করি এখন আমি !” তারপর ডাক্তার এল, ওষুধ এল, পথ্য এল, রচিত হল মুম্ষুর রোগশয্যা । ভূপতি মরবে তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু এখনো যখন মরেনি তাকে বাচাবার সমস্ত চেষ্টাই করতে হবে বৈকি। চার বছরের চেষ্টায় কোনো ফল হয় নি। তাও সত্য, কিন্তু ভূপতি শেষ হয়ে যাবার আগে তো চেষ্টা শেষ হতে পারে না। হােড়র্কাপানো পাহাড়ী শীতে অনেক রাত পৰ্যন্ত ছুটোছুটি করে পরাশর যে চিকিৎসার আয়োজন করে ফেলল তাতে আর খুত রইল না। র্যাপার-কম্বল জড়িয়ে রোগীর শিয়রে বসে দুজনে রাত কাটিয়ে দিল । রাতভোর দুজনেই যে কতবার সন্তৰ্পণে পরীক্ষা করে দেখল ভূপতির দেহে প্ৰাণ আছে কি না ! ঘুমে অথবা অবসাদে সারারাত ভূপতি মড়ার মতো পড়ে রইল। প্ৰথম সে চোখ মেলে চাইল অনেক বেলায়, ভাঙ্গা গলায় ফিসফিস আওয়াজে প্ৰথম কথা কইল, “আমি মারি নি ?” ডাক্তার পরামর্শ দিলেন যে এসব রোগের চিকিৎসা চিকিৎসা-কেন্দ্ৰেই ভালো হয়। আশা যদিও নেই বিশেষ কিছু, তবু ভূপতিকে সেখানে পাঠিয়ে দেওয়াই छेडि। 8ve