পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যে বঁচায় দশ বছর পরে মাধব দেশের গায়ে ফিরল। রিলিফ ওয়ার্ক চালাবার জন্য। গায়ের নাম বাঙ্গাতলা। গায়ের গৌরব ধনঞ্জয় সরকার। কলকাতায় ব্যবসা করে বড়লোক হয়ে তিনি বাঙ্গাতলাকে ধন্য করেছেন। প্রতিবছর তিনি একবার গায়ে আসেন, সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে এবং একদিনের জন্য। বাঙ্গাতলা ও আশেপাশের আরও কয়েকটা গায়ের লোক তঁকে অজস্র সম্মান দেয়। দুচারশো টাকা দান করে তিনি ফিরে যান। সম্মানের বিনিময়ে নয়, এমনি। সম্মান তাঁর পাওনাই আছে। বাঙ্গাতলায় যে অবৈতনিক বিদ্যা, দাতব্য চিকিৎসা, টিউব ওয়েলের জল ইত্যাদি পাওয়া যায় সে সব সরকার মশায়েরই কীতি । তঁরই আপিসে মাধব চাকরি করে। নির্ভরযোগ্য হাসিখুশি ভালোমানুষ, গুছিয়ে কাজ করতে পারে এবং কাজ করিয়ে নিতে জানে। আদর্শবাদী অথচ বেশ হিসেবী। প্রচুর বিনয় ও ট্যাক্ট আছে। মাঝে মাঝে বই পড়ার সখ চাপে, আবার কেটে যায়। স্ত্রীকে অত্যন্ত ভালোবাসে। ছেলেটিকে হাসিয়ে কঁদিয়ে আদর করে অবর্ণনীয় সুখ পায়। ধনঞ্জয় তাকে পছন্দ করেন এবং দেড়শো টাকা মাইনে দেন । বাঙ্গাতলায় লোকে না খেয়ে মরছে শুনে ধনঞ্জয়ের ভাবনা হয়েছিল। গায়ের লোকের ভালোমন্দের দায়িত্ব তো তার। গায়ের একত্ৰিশ জনকে তিনি সম্প্রতি আপিসে কাজ দিয়েছেন। ধনঞ্জয় নিজেই যে ফাপিছিলেন তা নয়, তার জানাশোনা আরও অনেকে ফুলে ঢোল হয়ে যাচ্ছিল। লোকের প্রয়োজনও বেড়েছিল সেই অনুপাতে-আপিসে, কারখানায় এবং মফস্বলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এটা ওটা গড়ে তোলবার স্থানে। শুধু বাঙ্গাতলা নয়, আশেপাশের আরও কতগুলি গায়ের হাজার খানেক লোককে কাজ দেবার সাধা ধনঞ্জয়ের ছিল। কেশপুরে মস্ত কাজ হচ্ছিল, সকলকে তিনি সেখানে পাঠিয়ে দিতেন। সবাই খাওয়া পেত, থাকার ঘর পেত, মজুরি পেত-তিনটিই ভালো পেত। কিন্তু ইচ্ছাটা প্ৰকাশ পাওয়ায় গাঁয়ে গায়ে তঁর নামে কুৎসা রটে গেল, তিনি নাকি কুলি চালানের দালালি নিয়েছেন। যত চাষী মজুর হতে রাজী ছিল তাদের একজনকেও তিনি তাই কাজ দেন নি। নিন্দেটা তাতে প্ৰমাণ হয়ে যেত ! তারপর ধনঞ্জয় স্থির করেছেন বাঙ্গাতলায় 8VR