পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যে বঁচায় দুঃস্থদের খাদ্য বিতরণ করবেন। না করে উপায়ও তার ছিল না । নানা দিক থেকে চাপ পড়ছিল। তার মতো বড়লোক অনেকে বিতরণ করছে, এ একটা চাপ । কনট্রাক্ট দেবার কতারা ইঙ্গিত করছেন, সে আরেকটা চাপ । বাঙ্গাতলা হিতৈষিণী সমিতি ( প্রেসিডেণ্ট—ধনঞ্জয় সরকার ) গায়ের লোকের প্রত্যাশাকে আবেদন নিবেদনের রূপ দিচ্ছে, সেও চাপ। তাছাড়া পূর্বোক্ত কুৎসাটির প্রতিকার করার বাসনার চাপ এবং হৃদয় নামক অঙ্গটির দয়াদাক্ষিণ্য ও উদারতার চাপ তো আছেই। কাজের ভারটা তিনি দিয়েছেন মাধবকে ; সেই সঙ্গে দরকারী উপদেশও দিয়েছেন। মাধবকে বেশি বলা বাহুল্য, কি ভাবে কি করতে হবে তার পলিসিট বাৎলে দিলেই সে সব সমঝে নেয় । মাধবের নীতিজ্ঞান অতি তীক্ষ্ম । “একটু সামলে চোলো হে।” ‘অজ্ঞে হঁ্য ।” ‘কলকাতায় লোকারণ্য কেন ? ফুটপাতে মানুষ মরতে আসছে কেন ? কলকাতায় খাবার আছে। বেশি খেতে দিলে চাদিকের লোক বাঙ্গাতলায় হুমড়ি খেয়ে পড়বে। সামলাতে পারবে না । কি অবস্থা ।” “ছোট মগের মাপে দেব ভাবছি। বেশি সইতেও পারবে না, পেট খারাপ হয়ে যাবে।” “অন্নই আসল জীবন । ব্যঞ্জন নয়, স্বাদগন্ধ নয়।” “নিশ্চয়ই। ভিক্ষের চালের আবার কঁাড়া-আকাড়া ।” “এমন অবস্থা আর হয় নি । ছিয়াত্তরের মন্বন্তর কোথা লাগে ! ভালো কথা মাধব, অক্ষয়ের বোনটা নাকি নিখোঁজ হয়েছে ?” “নিখোঁজ মানে ওই আর কি যা হয় বুঝলেন না ?” ‘তা, দোষ কি করে দি ? যুবতী মেয়ের খিদে একটু বেশিই হয়। আহা, এদিকে খিদের জালা, ওদিকে বদলোকের প্রলোভন, যুবতী মেয়ে তো যতই হোক । গায়ের কেউ ওকে দুটি খেতে দিতে পারল না ? ভদ্র ঘরের বাড়ন্ত যুবতী মেয়ে, চাইতে পারে না বলে কি দিতে নেই ? ছিঃ ছি! এ গায়ের কলঙ্ক, আমার কলঙ্ক । বিপাকে পড়লেও ভদ্রঘরে ভিক্ষে নেবে না। লুকিয়ে কিছু কিছু চাল ডাল ঘরে দিয়ে এলে ওদের মানটাও বঁাচে, প্ৰাণটাও বাচে।” “আমার দোষ নেই। অক্ষয়ের বিধবা মা আর যুবতী বোনটা যে গায়ে পড়ে 3Վ9N9