পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিলামসন চলা নিষেধ। সামান্য বলে কোনো ব্যাপারকে তুচ্ছ করা হয় না, বিচারের জন্য সোজা আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এক ধমকেই সাড়ে চার টাকা খাজনা আদায় হয় বটে বিস্তু ধমক দেওয়া তো আইনসঙ্গত নয়। দুটো মিষ্টি কথায় আপোষে অনেক ব্যাপারের মীমাংসা হয় বটে, কিন্তু তাতে তো প্ৰেষ্টিজ থাকে না । বিলামসন বলে, ‘প্ৰেষ্টিজ বজায় থাকার ওপর সব নির্ভর করে রায়, এটা কখনো ভুলো না । প্ৰেষ্টিজ বজায় রাখা চাই, প্ৰেষ্টিজ।” এত কাজ ও দায়িত্বের বিনিময়ে বিলামসন মাসে মাসে মোটে দেড় হাজার টাকা নেয়। মহীধর অবশ্য তাকে থাকবার বাড়ি দিয়েছে। আসবাব দিয়েছে, চাকর বাকর দিয়েছে, খাদ্য এবং পানীয় যোগাচ্ছে, মাঝে মাঝে সে যে পাটি দেয়। তার খরচটাও দিচ্ছে, তবু ধরতে গেলে বিলামসন যত কিছু করেছে এবং করছে তার তুলনায় মাসে দেড় হাজার টাকা কিছুই নয়। দূরে থেকে তাকে আসতে দেখলে গায়ের ছেলে বুড়ো স্ত্রী-পুরুষ চোখের পলকে উধাও হয়ে যেত বলে গোড়ার দিকে বিলামসনের বড় আপসোস ছিল। পালিয়ে যাবে কেন ? কি দরকার পালিয়ে যাবার ? যে যেখানে ছিল সেইখানেই দাড়িয়ে থাক, সে কাছাকাছি গেলে সেলাম করুক, পালিয়ে গিয়ে বেড়ার ফাক দিয়ে উকি দেওয়ার মতো অসভ্যতা করা কি উচিত ? মাঝে মাঝে দু’চারজনকে ঘরের ভেতর থেকে টানিয়ে এনে বিলামসন তাদের সঙ্গে আলাপ করত । সঙ্গের আর্দালিকে বলত, “সেলাম করনে বোলো। বাতিলা দে।” সেলাম করা হলে কয়েকবার মাথা হেলিয়ে বলত, “ডরতা কাহে ? ডরে মৎ ’ বলে আলাপ সাঙ্গ করে এগিয়ে যাবার আগে হাতের সরু বেতগাছা দিয়ে সপাং করে পথের ধারের আগাছার ডগাটি উড়িয়ে দিয়ে আড়চোখে চেয়ে দেখত, অভয় পাওয়া লোকটি কেমন চমকে উঠে ভড়কে যায় ! খুব বেশি রকম বেয়াদবি না করলে বেতগাছা সহজে মানুষের পিঠে পড়ত না। দীনু বাগদি একদিন অরেল্যের ঘোড়ায় চড়া দেখে বোকার মতো হাসছিল, লম্বা, লাঠিটা দু’হাতে মুঠা করে ধরে সিধা হয়ে দাড়িয়ে বুক ফুলিয়ে ইদারামের মতো হাসছিল। বিলামসন কি আর জানত না এরকম করে হাসাটা যে অপমানকার অসভ্যতা দীনু তা জানে না। তাই রাগ করে নয়, দীনু যা জানে না। তাকে শুধু সেটা জানিয়ে দেবার উদ্দেশ্যে তার নিকষ কালো পিঠের চামড়ায় বিলামসন চার 8 ግ(ሉ