পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাস ডিট্ৰিক্ট বোর্ডের বাধানো পাথুরে রাস্তার খানিক তফাতে আসল খড়পা গ্রাম। গ্রামটি ছোট, কিন্তু তারই একটি শাখা রাস্তার দুপাশে গড়ে উঠেছে। কয়েকটি ঘরবাড়ী, দোকান ও আড়ত। এদিকে তেইশ মাইল দূরে সদর সহর, ওদিকে সতর মাইল দূরে মহকুমা সহর। ছােট বড় দুটি সহরের মধ্যে একটি বাস যাতায়াত করে। সদর থেকে সকালে যায়। মহকুমায়, মহকুমা থেকে বিকালে ফেরে। সদরে। যাত্রীরা অধিকাংশই সদর ও মহকুমায় আসা যাওয়া করে মামলার খাতিরে। কোটি বন্ধ থাকলে বাসও সেদিন বন্ধ থাকে। খড়পায় বাস থামে এবং জল নেয়। যাত্রীরা গজেন ও রাজেনের দোকানে ভাগাভাগি করে খাবার কেনে, জগতের চায়ের দোকানে চা পান করে। রঘুনাথের দোকানে খড়পার বিখ্যাত তীতের কাপড়-গামছা দূর করে। মধু মাইতির পান বিড়ির দোকানে পান বিড়ি কেনে-কেউ কেউ সস্তা সিগারেট। দোকান আরও কয়েকটি আছে, ঘনশ্যাম দাসের একাধারে মনিহারী, মুদিখানা ও লোহার জিনিসের দোকান, নিতাই সামন্তের বাসনের দোকান, রঘু সামন্তের কামারখানা, আর ধনেশ সাহার ধান চালের আড়ত। আড়াতে ধান প্ৰায় থাকেই না, দুচার বস্তা চাল কেবল মজুত দেখা যায়। কে যে কখন সে দুচার বস্তা চাল কিনে নিয়ে যায় এবং কোথা থেকে আবার দুচার বস্ত| চাল আড়াতে আসে, খড়পার সকলেই তা জানে কিন্তু বলার অধিকার নেই জেনে উচ্চবাচ্য করে না । উপাধিহীন ডাক্তার দণ্ডধারী মাইতির ছােট একটি হােমিওপ্যাথিক ওষুধের দোকানও এখানে আছে। আড়াই হাত উঁচু ও দেড় হাত চওড়া একটি নীল নীল কাচ লাগানো আলমারিতে ওষুধ এবং সেই অনুপাতে একটি ছোট পালিশহীন কাঠের টেবিলের সামনে টুলে উপবিষ্ট স্বয়ং ডাক্তার দণ্ডধারী মাইতি, টেবিলে দুখানা পাতা এবড়ানো বই, হিসাবের খাতা, কাঠের দোয়াতদান ও বুক পরীক্ষার একনলা যন্ত্র। এখানকার সবচেয়ে নতুন এই ডাক্তারী দোকানটিকে সবচেয়ে প্ৰাচীন মনে হয় । ডাক্তার মাইতির পসার আছে। তার ওষুধের দাম কম, ভিজিটের টাকা কম। অথচ চিকিৎসা আশ্চৰ্য ফলপ্রদ। পাঁচ দশ মাইল দূরের গা থেকেও তাকে 8.