পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাস গোবর্ধনের অনেক আগে থেকে জলভরা বালতি নিয়ে অপেক্ষা করছে নিবারণ । তার অপেক্ষা করাটা যেন ছটফটানোর সামিল। হঠাৎ উঠে ঘর চলে যাচ্ছে, আবার ফিরে আসছে দশ পনের মিনিটের মধ্যে। বাড়ীতে তার একমাত্র বোনটি ছাড়া সকলের অসুখ। বৌ ছেলে আর ভায়ের গা-হাত-পা ফুলে জর হয়েছে, দণ্ডধারী দেখে বলেছে যে এটা ভালো চাল একদম না খাওয়া আর খারাপ চাল একটুখানি করে খাওয়ার ফল। অনাহারের বদলে খাটি সব্জী আর ফ্যানের বদলে দুটি ভাত খেলেই সেরে যাবে। বুড়ী ঠাকুমার বয়সের ব্যারামটা হঠাৎ খারাপের দিকে চলতে শুরু করেছে। ঠাকুমা মরবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। আরেকজন কাউকে সে পাছে সঙ্গে নিয়ে যায়, এই হয়েছে নিবারণের ভয় । বারবার সে তাই ঘরে ছুটে যাচ্ছে। আবার এদিকে বাসের ড্রাইভার তার জন্য সেরা তিনেক চাল আনবে, ঘরেও তার তাই মন টিকছে না । নইলে, বালতিভর জল রয়েছে, একটা দিন কি তার হাজির না থাকলে চলে না ! 曼 “তোমার কি দাদা, যখন খুশি কুমড়োটি লিয়ে ঘর যাবে। মোকে ঠায় বসি থাকতি হবে যতখন না। শালার বাস এসে।” ‘এসবে। ইবারে এসবে।” কিন্তু বাস আসে না। রাত বেড়ে চলে। গায়ে কখন রাত দুপুর হয় বাসের কি জানা নেই ? আলাপ বিলাপের শব্দ চারিদিকে ঝিমিয়ে আসে । দুএকটি দোকান বন্ধ হয়ে যায়, অসময়ের বাসের সঙ্গে এদের স্বাথ তেমনভাবে জড়িত নয়। দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে থাকতে থাকতে নিবারণের মাথাটা ধীরে ধীরে বুকে নেমে আসে এবং তার গলায় শুরু হয় শ্লেষ্মার একটা অদ্ভুত ঘড়ঘড় আওয়াজ। গোবর্ধনেরও ঘুম পায়। শ্ৰীধন বলে, “অ গবর্ধন, এ যে খিদে পেয়ে গেল দস্তুরমত ! বাড়ী থেকে চট করে খাওয়াটা সেরে আসি। বাস যদি এসে পড়ে, ড্রাইভারকে এই চারগণ্ডী পয়সা দিয়ে একটু দাড়াতে বলিস বাবা।” 'डांडा, बलिद ।' ‘শব্দ শুনেই ছুটে আসব। তবে কি জানিস, মোটাসোটা মানুষ অত ছুটতে • পারিনে ৷” শ্ৰীধন মাইতি চলে গেলে গোবর্ধন ঝিমোতে বিমোতে প্ৰায় ঘুমিয়ে পড়ে। হঠাৎ কানের কাছে একটা উৎকট সোরগোলে সে সজাগ হয়ে ওঠে। আরেকটু 8avo