পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাস মাথাটা শুধু নিচু হয়ে রইল। আগাগোড়া। ঈশ্বর চুপি চুপি শ্ৰীমন্ত সহায়কে বলল, “পেট ভরে খাওয়া কি সইবে এদের ? কাল সব কটার না অসুখ করে।” পেট ভরে খিচুড়ি খেল গোবর্ধন, তার কুমড়ো ভাজা দিয়ে। বহুকাল একবারও এমন পেট ভরে খাওয়া তার জোটেনি, শরীরটা ক্রমে অবশ থেকে অবশ তার হয়ে আসতে লাগল। সকলের শোবার ব্যবস্থা করার কাজটাতে ফাকি দিয়ে সে বাড়ি ফিরে গেল। ভরা পেট, অলস দেহ, ঘুমের আবেশ কিছুতেই কিন্তু তার মনে একটি কঁাটার খচখচানি বন্ধ করতে পারল না। গুণমতী গুড় মুড়ি পাঠায় নি। একবেলা সে আধাপেটা ভাত খায়, ঘরে কিছু মুড়ি থাকলেও গুণমতী একমুঠে তার স্বামীকে পাঠায় নি । 'মুড়ি পাঠাস নি যে ?” ‘পাঠাই নি । মিন্সে বলে কি গো ! নানুকে দিয়ে পাঠালাম যে ?? নানুকে দিয়ে গুণমতী। তবে মুড়ি পাঠিয়েছিল ? পেটের জালায় নানুই সেটা খেয়ে ফেলেছে ? অসংখ্যবার ক্ষুধার জালা সয়ে সয়ে জ্বালাটা ভুলে যাবার অভ্যাস জন্মে গেছে গোবধানের। আজ সন্ধ্যার অসহ জালাটাও সে ভুলে গিয়েছিল। তার শুধু জাল ছিল অভিমানের, সেটা মিটে যেতে গোবধােন গভীর তৃপ্তি বোধ করল। ঘুম আসতে কিন্তু তার দেরি হল অনেক। কতকাল পরে পেটভরা খাওয়া । চোখ বুজে ঝিম ধরে পড়ে থাকলেও একটু চেতনা তার সজাগ হয়েই রইল। OV)