পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী বাড়ি হয়ে গিয়েছিল। একরাত্রে সব একঘেয়ে হয়ে গেল, বাপের বাড়ি যাওয়ার আগে একটানা ছমাস একসঙ্গে কাটিয়ে যেমন হয়েছিল। ঘুম আসছিল। আপসোসটাই যেন ঘুম কাটানোর বেশি কি করে দিয়ে গেল মেনকার। স্তিমিত চোখের একটু চমক আর পিঠের ঠিক মাঝখানে মৃদু। শির শির। গোপাল মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছে। পড়ায় বাধা দিলে সে বড় বিরক্ত হয়। কিছু বলে না, কিন্তু বিরক্ত হয়। বিছানায় ফিরে গিয়ে মেনকা ইতস্ততঃ করে, যতক্ষণ না তার মনে পড়ে शों যে বেশি রাত জেগে বই পড়লে গোপালের মাথা গরম হয়ে যায়। ঘুম\ভাঙিয়ে তাকে বড় জালাতন করে গোপাল। মনে হয়, শান্ত সুবোধ মানুষটা যেন दळ গেছে, মদ খেয়েছে। এমন বিশ্ৰী লাগে মেনকার, এমন রাগ হয় । সে কি পালিয়ে যাবে? পরদিন সে কি ঘরে আসবে না ? দিনের পর দিন ? ঘুম ভাঙিয়ে একটা মানুষকে কষ্ট দেওয়া কেন—যার শরীরও ভালো নয়! অথচ সে যদি কোনো দিন দরকারী কথা বলতে মাঝরাতে গোপালের ঘুম ভাঙায়—যেদিন কোনো অজানা কারণে তার নিজের ঘুম আসে না অথবা হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে মনটা অদ্ভুত রকম খারাপ লাগে আর সমস্ত শরীরটা অস্থির অস্থির করায় ছটফট করতে ইচ্ছা হয়—গোপাল শুধু বলে, কাল শুনিব, সকালে শুনব ! তবু যদি সে নিজেকে তার বুকে গুজে দেবার চেষ্টা করতে করতে করুণ সুরে বলে, “ওগো শুনছো ? বুকটা কেমন জ্বালা করছে।” “একটু সোডা খাও), বলে সে পাশ ফিরে বালিশটা অ্যাকড়ে ঘুমোতে থাকে। তখন মেনকার বুকটা সত্যি জালা করে। নমাসে ছমাসে একটা রাতে হয়তো এরকম ঘুম আসে না অথবা এভাবে ঘুম ভেঙে যায়-হলই বা তা অম্বলের জন্য, কথা কইবার একটা সে লোক পাবে না, পাওনা আদরের একটু তার জুটবে না এই ভয়ানক দরকারের সময় ! ইতস্ততঃ করার কয়েক মিনিটে আবার ঘুমটা ফিরে এসেছিল, হাই তুলে মেনকা বলল, “শোবে না ? এত যে পড়ছ, চোখ তো আবার কট কট করবে। কাল ?” গোপাল বলল, ‘চ্যাপ্টারটা শেষ করেই শোব, পাচ মিনিট ।” মেনকা শুয়ে চোখ বুজল। ঘুমে শরীর অবশ হয়ে আসবার আরাম অনুভবের । ক্ষমতাটুকু প্ৰায় ফুরিয়ে এসেছে, বই ফেলে টুল ঠেলে চেয়ার সরিয়ে গোপালের উঠবার শব্দে একটু সচেতন হয়ে উঠল। ভয়ে ভয়ে চোখ মেলে একবার গোপালের ( 0 9