পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বামী-স্ত্রী পিসীমা ঢোক গিলে বললেন, “তবে তাই কর ।” তারপর রাত একটায় বাড়ির সব আলো নিভল। গোপাল শুল ভুপালের ছোট চৌকির ছোট বিছানায়, মেনকা শুল অনুবিনু দুই ননদের মাঝখানে। রাত্রিবেলা একান্ত দুর্লভ বৌদিকে ঘটনাচক্রে কাছে পেয়ে অনুবিনুর আহলাদের সীমা নেই। না ঘুমিয়ে সারারাত গল্প করবে ঘোষণা করে মিনিট দশেক ফোয়ারার মতো এবং তারপর আরও দশ মিনিট ঝিমিয়ে কথা বলে আধা ঘণ্টার মধ্যে দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ল। মেনকা রইল জেগে । গোপালকে তার কত কথা বলার ছিল, কিছুই বলা হল না। আজকের রাতটা কাটবে, এই দীর্ঘ অফুরন্ত রাত, তারপর সারাটা দিন যাবে, কিছুতে কাটতে চায় না। এমন একটা দিন, রাত দশটায় সে গোপালের সঙ্গে কথা বলবার সুযোগ পাবে। ততক্ষণে বাসি হয়ে যাবে সব কথা । বলার কোনো মানে থাকবে না । তাছাড়া, পিসীমা কাল ওদের এখানে থেকে যেতে বলেছেন । কাল দিনটা বড় খারাপ, যাত্রা শুভ নয়। রসিকেরা হয়তো কালও এখানে থেকে যাবে, রাত্রে দখল করবে। তার ঘর। তাহলে সেই পরশু। রাত্রের আগে গোপালকে সে আর কাছে পাচ্ছে না । কি হাতচ্ছাড়া একটা বাড়িটি গোপাল নিয়েছে, একটা বাড়তি ঘর নেই। বাড়তি ঘর থাকবেই বা কি করে ? ভাই বোন মাসী পিসীতে বাড়ি গিজ গিজ করছে। গোপালের দোষ নেই, এই বাড়ির জন্যই মাসে মাসে পয়ত্ৰিশ টাকা ভাড়া গুনছে। সকলের সুখের জন্য খেটে খেটে সারা হয়ে গেল মানুষটা। একটু রোগাও যেন হয়ে গেছে আজকাল । নিশ্চয় রোগ হয়ে গেছে। পশু যখন তাকে জড়িয়ে ধরেছিল, কই, আগের মতো জোরে তো ধরে নি । কাছে থাকলে আজকেই পরখ করা যেত কতখানি দুর্বল হয়ে পড়েছে। কাল সকালে চেয়ে দেখতে হবে গোপালের চেহারা কেমন আছে। কাল থেকে একটু বেশি মাছ দুধ খাওয়াতে হবে তাকে । এখন গিয়ে যদি একবার দেখে আসে ? ভূপাল আর কানাই নিশ্চয় ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু আলো জ্বালালে যদি ওদের ঘুম ভেঙে যায়। অন্ধকারে গারে হাত বুলোতে গেলে গোপাল যদি জেগে যায়। আজ রাত্রে কিছু হয় না। আজ সে ফাদে পড়ে গেছে। হার্টফেল করে এখন সে যদি মরেও যায়, গোপালের একটু আদর পাবে না। কোনো উপায় নেই, কোনো ব্যবস্থা করা যায় না। একটা বাড়তি ঘর যদি বাড়িতে থাকত । রাত্রির স্তব্ধতা মেনকার কানে ঝমােঝম শব্দ তুলে দেয়। ছুতো আর কৈফিয়তের OS