পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী পালাবার ক্ষমতা । তাকে আর কারো ধরে রাখবার প্রয়োজন রইল না। নড়তে গিয়ে চুলে টান লাগায় দামিনী আর্তনাদ করে উঠতে লাগল। কুঞ্জ টিটকারী দিয়ে দিয়ে বলতে লাগল, “রও বাছাধন রও। এখনি হয়েছে কি ! মজাটি টের পাওয়াচ্ছি। তোমায় !" ধীরেন প্রথম দিকে চুপ করে ছিল। বাধা দিয়ে লাভ নেই। গায়ের লোক কথা শোনে না, বিরক্ত হয়। এবার সে আর ধৈর্য ধরতে পারল না। “তুমি কি পাগল হয়ে গেছে, নবীন ?” “তুমি চুপ কর, ভাই।” উঠানে ত্রিশ পয়ত্ৰিশ জন পুরুষ ও নারী এবং গোটা পাচেক লণ্ঠন জড়ো হয়েছে। মেয়েদের সংখ্যা খুব কম, যারা এসেছে বয়সও তাদের বেশী। কম বয়সী মেয়েরা আসতে সাহস পায় নি, অনুমতিও পায়নি। যদি ছোয়াচ লাগে, নজর লাগে, অপরাধ হয়! মন্ত্রমুগ্ধের মত এতগুলি মেয়েপুরুষ দাওয়ার দিকে তাকিয়ে ঘোষা ঘোষি করে দাড়িয়ে থাকে, এই দুর্লভ রোমাঞ্চ থেকে তাদের বঞ্চিত করার ক্ষমতা নবীনের নেই। দাওয়াটি যেন ষ্টেজ, সেখানে যেন মানুষের জ্ঞানবুদ্ধির অতীত রহস্যকে সহজবোধ্য নাটকের রূপ দিয়ে অভিনয় করা হচ্ছে, ঘরের দুয়ারে কুঞ্জ যেন আমদানী করেছে জীবনের শেষ সীমানার ওপারের ম্যাজিক। এমন ঘরোয়া, এমন হয়ে উঠেছে দামিনীর মধ্যে আদেহী ভয়ঙ্করের এই ঘনিষ্ঠ আবির্ভাব ! ভয় সকলে ভুলে গেছে। শুধু আছে। তীব্ৰ উত্তেজনা এবং কৌতুহল ভরা পরম উপভোগ্য শিহরণ । একলা সামনে এগিয়ে, পাশে সরে, পিছু হটে, সামনে পিছনে দুলে দুলে কুঞ্জ দুৰ্বোধ্য মন্ত্র আওড়াতে থাকে। মালসাতে আগুন করে তাতে সে একটি দুটি শুকনো পাতা আর শিকড় পুড়তে দেয়, চামড়া পোড়ার মত একটা উৎকট গন্ধে চারিদিক ভরে যায়। দামিনীর আর্তনাদ ও ছটফটানি ধীরে ধীরে কমে আসছিল, এক সময় খুঁটিতে পিঠ ঠেকিয়ে কাঠ হয়ে দাড়িয়ে সে বোজ’ বোজ চোখে কুঞ্জর দিকে তাকিয়ে নিম্পন্দ হয়ে রইল। তখন একটা কাচ হলুদ পুড়িয়ে কুঞ্জ তার নাকের কাছে ধরল। দামিনীর দুলু ঢুলু চােখ ধীরে ধীরে বিষ্কারিত হয়ে উঠল। সর্বাঙ্গে ঘন ঘন শিহরণ বয়ে যেতে লাগল। ‘কে তুই ? বল, তুই কে ? (SV)