পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বোম চুলের সঙ্গে জীবনটাই যেন ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে মনে হতে লাগল বটে। তবু চুলের জন্য পৰ্যন্ত টনিকের ব্যবস্থা করল না । ক্ষীণ কাতর কণ্ঠে গোপালকে জিজ্ঞাসা করল, ‘এবারও যদি ছেলে হয় ?” গোপাল উদাসভাবে বলল, “হলে হবে।’ খানিকটা বিমিয়ে সুধা আবার জিজ্ঞাসা করল, “আচ্ছ এমন কি কোন উপায় নেই, যাতে লোক ছেলে চাইলে ছেলে পায়, মেয়ে চাইলে মেয়ে ?” গোপাল হঠাৎ সচেতন হয়ে তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “ব্যাপারটা কি শুনি ? তোমার হয়েছে কি ?” সুধা রেগে বলল, “ব্যাপার পরে শুনো, আগে যা বললাম তার জবাবটা দিয়ে নাও ।” জবাব গোপাল কি দেবে ? এ তো জীবন্ত প্রশ্ন নয় যে মানুষ প্রশ্ন করতে শিখবার পর অনেককাল কেটে গিয়েছে বলেই জবাব একটা আবিষ্কৃত হয়ে থাকবে, —জীবনের এ একটা সাধারণ প্রশ্ন, সাধারণ কৌতুহল। গোপাল তাই চিরন্তন যুক্তি দেখিয়ে বলল, “হয়তো উপায় আছে, মানুষ তা জানে না।” মানুষ কেন জানে না। এরকম কুটিল প্রশ্ন করার মত জটিল মনোবিকার সুধার জন্মে নি, সে তাই বিনা প্ৰতিবাদে প্ৰতিদিন রোগ হয়ে যেতে আরম্ভ করল । রোগ হতে হতে মাস দেড়েকের মধ্যে এমন রোগাই হয়ে গেল যে জন্মাবার আগেই মেয়েটি তার গেল মরে । সুধা কেঁদেই অস্থির। হায়, মেয়ে মেয়ে করে পাগল হয়ে মেয়েকেই সে হারিয়ে বসিল ! মাথা খারাপ না হলে মেয়ে কিনা জানার আগে মেয়ে নয় মনে করে মানুষ এমন ব্যাকুল হয় ? কদিন খুব কঁদোকাটা করে সুধার মন শান্ত হবার আর স্নায়ু অবসন্ন হবার সুযোগ পেল। তার ফলে ধীরে ধীরে এল স্থায়ী বিষাদ, যা অনেকটা পরিতৃপ্তির সামিল। পরের বার একটি মেয়ে হল সুধার। অনেকদিন পরে-প্ৰায় চার বছর । এইখানে উনিশ বছরের ছেদ দেবার সুযোগে সুধার মেয়ে হওয়ার সঙ্গে পৃথিবীর বোমা ফাটাফাটি সম্পর্কটা সংক্ষেপে একটু ব্যাখ্যা করি। এটা অবশ্য একটা চরম দৃষ্টান্ত কিন্তু সেজন্যে কিছু এসে যায় না। দুয়ে আর দুয়ে যে যুক্তিতে চার হয় দু’লখে আর দু'লখে সেই যুক্তিতেই হয় চারলাখ। তুলনামূলকতার ঘোরপ্যাচ R