পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তোমরা সবাই ভালো শুনে কেবল সুবালা নয়, উপস্থিত সকলেই থ বনে গেল। সকলের মনে পড়ল, সত্য সত্যই রমেনের সঙ্গে সুবালার দু’দিক থেকে সম্পর্ক আছে, সে তার এক পিসেমশায়ের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। দিবাকর অনেক অনেক দূর সম্পর্কের পিসেমশায়, কিন্তু প্ৰথমে রমেনের বাবার মাসতুতো বোনকে বিয়ে করেছিলেন বলে সুবালার স্বামী নন্দগোপাল তার খাটি মাসতুতো পিসেমশায়। ছেলেটা ভুল করেনি, সুবালাকে জন্মে কখনো চোখে না দেখে থাকলেও সে যে কে মনে মনে আন্দাজ করে তার সঙ্গে ডবল সম্পর্কের মধ্যে কোনটা বেশী লাগসই তাও স্থির করে ফেলেছে । এতে যেমন তেমন ছেলে নয় ! ইতিমধ্যে দিবাকর বাবুর স্ত্রী এসে পড়েছিলেন। মানুষটা তিনি রোগ এবং লম্বা, মুখখানা বদমেজাজী। চশমার ভেতর দিয়ে রমেনকে নিরীক্ষণ করে তিনি যথাবিহিত স্নেহদ্র বিস্ময়ের ভদ্রত করে বললেন, ‘ওমা, তুমি চারুদাদার ছেলে ?” রমেন বলল, “বাবাকে আপনি দাদা বলেন পিসীমা ? আমি শুনেছিলাম। বাবা আপনার চেয়ে ছোট ।” পিসীমা চক করে টোক গিলে ফেললেন। বিড়বিড় করে বললেন, ‘হ্যা, দাদা বলি ।” তারপর প্রায় ধমক দিয়ে বলে উঠলেন, “নাও, জাম-কাপড় ছেড়ে মুখ হাত-ধুয়ে নাও।” রমেনের প্রণাম গ্রহণের জন্য গুরুজনেরা প্ৰস্তুত হয়ে এতক্ষণ অপেক্ষা করাছিলেন, ভাবছিলেন প্ৰণাম করার কথাটা বুঝি তার মনে নেই। রমেন জামার বোতাম খুলতে আরম্ভ করায় সুবালা আর চুপ করে থাকতে পারল না। ‘পিসীমা পিসেমশাইকে প্ৰণাম কর রমেন ।” “আমি তো কাউকে প্ৰণাম করি না, ছোট পিসীমা ?” ‘প্ৰণাম কর না ।” 'প্ৰণাম করা ছেড়ে দিয়েছি।” এমন ভাবে রমেন কথাটা বলল, যেন একটা তার বদ অভ্যাস ছিল, খুব মনের ‘জোর দেখিয়ে অভ্যাসটা ত্যাগ করেছে। সুবালা আর পিসীমা বাক্যহার হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলেন। পিসীমার সেজ মেয়ে রানী খিলখিল করে হেসে উঠেই বিবৰ্ণ হয়ে চুপ করে গেল। দিবাকরবাৰু, ঘরে আছেন ভুলে গিয়ে সে হেসে ফেলেছিল। বাড়ীতে বিশেষ করে তার সামনে, কারো শব্দ করে হাসাটা দিবাকরবাবু পছন্দ করেন না। অন্য সময় হয়তো তিনি হাসি বন্ধ করা সত্ত্বেও রানীকে R V8(t)