পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তোমরা সবাই ভালো একচেটিয়া হয়েই থাকে, বড়রা শুধু তাদের মারে। যখন তখন যার যাকে খুশী হরদম মারে। মনের মধ্যে সকলে যেন কি জ্বালা পুষে রেখেছে, ছোটদের ওপর কারণে অকারণে ঝাল না ঝেড়ে থাকতে পারে না। নিজের বইখাতা গুছিয়ে রমেন এক ঘরে বসে আছে। সুকোমল বলেছিল, সারাদিন না খেয়ে ঘরে বসে থাকলেও কেউ আর তাকে ডাকতে আসবে না। রমেন তা স্বীকার করেনি এবং তার ভুল ধারণা ভেঙ্গে দেবােব জন্য তাকে बांशेऊ পাঠিয়ে নিজে প্ৰতীক্ষা করছে। তেল মেখে গামছা হাতে সে একেবারে তৈরী হয়ে আছে, দু’চার মিনিটের মধ্যেই যে আদর আহবান আসবে তাতে যেন তার কিছু মাত্র সন্দেহ নেই। সুধাকরবাবুর স্ত্রী মনোরম সত্য সত্যই কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘরে এলেন। ঠিক নাইতে যাওয়ার আহবান নিয়ে নয়, পরিচয় করতে। রমেনের বেয়াদবির গন্ধ ইতিমধ্যেই মুখে মুখে আলোচিত হয়ে উপন্যাসে দাড়িয়ে গেছে, মনোরম। এতক্ষণ তাই শুনছিলেন। দিবাকরবাবুর স্ত্রী অনুপমা আর সুধাকর বাবুর স্ত্রী মনোরমা এই দু’টি জা’য়ের মনের গতি সর্বদাই পূব আর পশ্চিমের মত পরস্পরবিরোধী। একজন লালপাড় শাড়ী পরলে অন্যজন পরেন। কালোপাড় শাড়ী, একজন রুইমাছ খেলে পরে অন্যজন খান কৈ মাছ, একজন কারো নিন্দে করলে অন্যজন তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠেন। একজনের কোন ছেলে বা মেয়ে পৰ্যন্ত যদি অন্যজনের একটু বেশী আদর পায় নিজের সেই ছেলে বা মেয়েকে ধরে তার মা। আচ্ছা করে পিটিয়ে দেন। এখন, রমেন যখন আজ এল, মনোরমার কাছে সংবাদ ঠিকমতই পৌছেছিল। কিন্তু অনুপমা তাকে অভ্যর্থনা করতে গিয়েছিলেন বলে তিনি তাকে একবার চোখের দেখা দেখতে যাওয়ারও উচিত মনে করেন নি। তারপর অনুপমা যখন তীব্রভাবে রমেনের নিন্দে শুরু করলেন এবং স্পষ্ট ভাষাতেই ঘোষণা করে দিলেন যে বাড়ীর ছেলেদের মাথা খাবার জন্য এ শনিগ্রহকে তিনি বাড়ীতে জায়গা দিতে পারবেন না, দু’চারদিন দেখে দূর দূর করে খেদিয়ে দেবেন, তখন মনোরমার মনে হল এই তেজী সুবিবেচক, আদর্শ চরিত্র ছেলেটির সঙ্গে তো অতি অবশ্য র্তার ভাব করা দরকার! ঘরে ঢুকেই তাই হাসিমুখে অত্যন্ত মিষ্টি স্বরে বললেন, "একলাটি বসে আছো বাবা ? বাড়ী ছেড়ে এসে মন কেমন করছে ? রমেন কঁাদ কঁাদ হয়ে বলল-'হঁ্যা ।” মনোরমা একটু ভড়কে গেলেন। এত বড় ধাড়ী ছেলের মুখে এমন ধারা জবাব V9)