পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চুরি চুরি খেলা ছেলেবেলা চোর চোর খেলায় আমার ছিল বুড়ী ছুয়ে বিশ্রামের খেলা। আজও আমি তেমনি অশক্ত হয়ে আছি মাধুরী ! নিজে চুরি হয়ে গেলেও ঠেকাবার ক্ষমতা বলিল, জানিনে। কিন্তু দুর্বলের সঙ্গে ছাড়া যে খেলতে পারে না। সে তবে কি করবে? সে সকলের খেলা দেখবে, একটা মোটা বই টানিয়া নিয়া অনন্ত বলিল, হাল্কা মানুষ ভেসে উঠবে আকাশে । সেখান থেকে পৃথিবীর দিকে চেয়ে থাকবে। মর্ত্যের সুখদুঃখের সঙ্গে ওছাড়া তার আর সম্পর্ক কি ? আকাশ ছোয়া কথা। অনন্তের মুখের দিকে চাহিয়া মাধুরী চুপ করিয়া দাড়াইয়া রহিল। অনন্ত মোটা বইটার উপর ঝুকিয়া পড়িল । অনেকক্ষণ পরে ভয়ে ভয়ে মাধুরী বলিল, আপনার ওষুধ আনিব ? কিছু খেয়ে সেটা খেতে হয় ? অনন্ত মুখ তুলিয়া বলিল, আনে । কিন্তু একটা কথা শুনে যাও । সুশীলকে বরখাস্ত করতে চেয়েছিলাম বলে কমলার সঙ্গে আজ আমার ঝগড়া হয়েছে। আর ঝগড়া করবেন না । বলিয়া মাধুরী ওষুধ আনিতে চলিয়া গেল। ওষুধ খাইবার সময় অনন্তের মনে হইল একবার উপরে গিয়া গোপনে আশিতে দেখিয়া আসিবে তার চোখ দুটিও রক্তবর্ণ হইয়া উঠিয়াছে কিনা, কপালের একটা শিরা দপদপা করিতেছে কিনা। সেও কি আজ অসুস্থতার কবি নয় ? প্ৰথমদিন কমলা খালি পায়ে কঁকর-বিছানো পথে হঁটিতে পারে নাই। এখন কোনই অসুবিধা হয় না । পথের দু’দিকে ফুলের চারাগুলি যেন ফুল ফোটানোর প্রতিযোগিতা শুরু করিয়াছে। পটু পটু করিয়া কয়েকটা রক্তগোলাপ ছিড়িয়া কমলা খোকার হাতে দিল। ফুলগুলির দিকে হাত বাড়াইয়া খোকা অস্ফুট আবেদন জানাইয়াছিল বলিয়া নয়, ফুল ছিড়িতে আজকাল আর তার দ্বিধা হয় না । সুশীলের ঘর তিনখানার পিছনে প্ৰকাণ্ড কৃষ্ণচুড়ার ডগায় পড়ন্ত রোদ বিবৰ্ণ - সোনার রঙ মাখাইয়াছে। আকাশে মেঘ নাই কিন্তু কাৰ্তিকের কুয়াশার ইঙ্গিতে । শূন্য ভরাট। রোদের রঙ তা আংশিক আত্মসাৎ করিয়াছে। ec (t)