পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ওমিলনাইন বলিত তুমি বড় ছেলেমানুষ। প্রমথ ভাবিত, তার অনুতাপ দেখিয়া মমতার বশে সুনীতি তাকে সাত্মনা দিতেছে। তারপর যখন সে জানিতে পারিল চিরদিনের জন্য তাকে জীবনের সার্থী করিবার সাধ সুনীতির কোনদিনই ছিল না, তখন সে হইয়া গেল একেবারে স্তম্ভিত। আত্মসম্বরণ করার জন্য সে একেবারে সাড়ে চারশে মাইল তফাতে কিছুদিনের জন্য চলিয়া গেল বটে। কিন্তু সেখানেও সময়ে অসময়ে সুনীতির মাথার চুলের ওমিলনাইন তেলের মৃদু গন্ধ অনুভব করিয়া মাথা-ধরা ও গা বমি বমি আরম্ভ হওয়ায় সে আরও বেশী হতভম্ব হইয়া গেল। সাড়ে চারশে মাইল বাতাসে গন্ধ ভাসিয়া আসিবে এমন ম্যাজিক তে ওমিলনাইন কেশতৈলের নাই ! যে বাড়ীতে সে অতিথি হইয়া আছে সে বাড়ীর মেয়েরা ওমিলনাইন তেলের নামও জানে না, সুনীতি ভিন্ন ন'রকম দেশী ও বিলাতি কেশতৈল একত্র মিশাইয়া ব্যবহার করিতে পারার মত টাকা অনেকের থাকিতে পারে। কিন্তু সখা কারো আছে কিনা সন্দেহ ! সুনীতির সাড়ী, ব্লাউজ, খোপা, চালচলন প্ৰভৃতি অনেক মেয়ে নকল করার চেষ্টা করিয়াছে কিন্তু তার কেশতৈলের সুবাসটি চিরদিন হইয়া থাকিয়াছে অননুকরণীয়। সুনীতির আরেকটা নাম ছিল 'ওমিলনাইন হেয়ার অয়েল । সুনীতির স্মৃতি যে একটা কেশতৈলের গন্ধ হইয়া রহিল প্ৰমথের কাছে, এ এক ধরনের মানসিক বিকার । নারীসংক্রান্ত না হোক এরকম অভিজ্ঞতা অনেকের জীবনেই আছে। বিশেষ কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ দশ-পনের বছর কিম্বা তারও বেশী পুরানো দিনের এক অবর্ণনীয় অনুভূতি দু’একবার কে না অনুভব করে জীবনে ? পৃথিবীর রূপ, বাতাসের স্পর্শ ও গন্ধ, হৃদয়ের রসানুভূতি সমস্ত মিলিয়া জীবনের বহু পুরাতন ক্ষুদ্র এক অংশকে পুনরায় স্বষ্টি করিয়া দেয়। কচুবনে বৃষ্টি পড়িতে দেখিলে এখনো প্রমথ হইয়া যায় বারো বছরের বালক, বসিয়া থাকে নবাবদের আমলের পুরানো এক সহরে একটা বহুকালের পরিত্যক্ত ভাঙ্গা একটা ঘরে ইটের স্তপের আড়ালে, শোকে ঝাঁটি, কুকুরশোেক প্রভৃতি বুনোচারার গন্ধ আর অনুভব করে মৃদু বিষাক্ত বাচ্চ একটা সাপের কামড়। সুনীতির স্মৃতি তেমনি পরিপূর্ণ হইয়া আছে ওমিলনাইন তেলের গন্ধে। এখন, সুনীতির সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার চার বছর পরে সুনীতির স্মৃতি আর সবদিক দিয়াই প্ৰায় প্ৰমথের কাছে মূল্যহীন হইয়া গিয়াছে, শুধু একটা গভীর অবসন্নতা ও মেয়েদের প্রতি (፩ ዓ\©