পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্রন্থাবলী সে অতদূর অসুস্থ হইয়া পড়ে একথা জানিলে হাসি ব্যাপারটা ঠিক কিভাবে গ্ৰহণ করিবে বুঝিতে না পারিয়া তাকে সব কথা জানাইতে তার সাহস হয় না। কে জানে হাসি বিশ্বাস করিবে কি না যে আজকাল সুনীতির প্রতি আকস্মিক ক্রোধ ও ঘূণার সঞ্চার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আগের চেয়েও জোরালো ভাবে সে ওমিলনাইনের গন্ধ পায়, আগের চেয়েও বেশী বিচলিত হইয় পড়ে। হয়ত ধীরে ধীরে হাসির সঙ্গে তার যে গভীর অন্তরঙ্গতা জন্মিতেছে। এসময় হাসিকে সুনীতির কাহিনী জানাইয়া দিলে সব নষ্ট হইয়া যাইবে। সুখে শান্তিতে জীবন-যাপনের যে সম্ভাবনা তার দেখা দিয়াছে চিরদিনের জন্য তাহা হইয়া যাইবে অসম্ভব। এতদিন পরে সুনীতির সম্বন্ধে নিজের মানসিক পরিবর্তন প্রমথকে আশ্চর্য ও চিন্তিত করিয়া রাখে। ব্যক্তিগতভাবে একজনের সম্বন্ধে এতকাল উদাসীন থাকিবার পর, একটা বিষাদময় বৈরাগ্যে জীবনের সুখ-দুঃখকে মৃদুভাবে উপেক্ষা করিয়া দশজনের মাঝখানে এতকাল বঁচিয়া থাকিয়া আবার বাস্তবজীবনকে ভালবাসিয়া নূতনভাবে জীবনটা আরম্ভ করিবার পর সেই একজনের প্রতি এমন ভয়ানক বিদ্বেষ ও ঘূণা আসিবার অর্থ কি ? এসব মানসিক বিকারের কি আবির্ভাব ঘটা উচিত ছিল না। তখন, সুনীতির ব্যবহার যখন তাকে আধমরা করিয়া দিয়াছিল ? সুনীতিকে প্রায় ভুলিয়া যাওয়ার পর সে কি তার জন্য নূতন করিয়া বিরহের জালা অনুভব করিতে আরম্ভ করিল ? এ তো বড় খাপছাড়া কথা ! মাঝে মাঝে কি ভাব এত ?-হাসি জিজ্ঞাসা করে । তোমার কথা ভাবি ৷ হাসি খুশী হইয়া বলে, সত্যি ? কিন্তু আমি যখন কাছে থাকব না। তখন আমার কথা ভেবে,-“এখন থেকে কেন ? মা তো কদিন থেকে লিখছেন যাবার জন্য, এসেছিও তো অনেকদিন হল, মাসখানেকের জন্যে দাও না পাঠিয়ে আমাকে মার কাছে ? প্রমথ অস্বাভাবিক ব্যাকুলতার সঙ্গে বলে, না না, এখন তোমার কোথাও যাওয়া হবে না । তোমায় ছেড়ে আমি এখন একদিনও থাকতে পারব না । আগে প্ৰথমে নাকে লাগিত ওমিনাইন তেলের গন্ধ তারপর আসিত অন্য উপসর্গ। আজকাল প্ৰথমে প্রমথ সুনীতির কথা ভাবিয়া মনটা বিতৃষ্ণায় ভরিয়া তোলে তারপর আসে ওমিলনাইনের সুবাস ও পরবর্তী কষ্টগুলি। ব্যাপারটা , প্ৰমথকে বেশীরকম দুশ্চিন্তায় ফেলিয়া দিয়াছে এইজন্য যে এই অস্বাভাবিক আক্রমণ @ ዓb”