পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ওমিলনাইন ঘটিবার সময় ছাড়া বাকী প্ৰায় সব সময়েই সে জীবনকে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করিতে করিতে মহানন্দে বাচিয়া থাকে। আগে সে তার বিকারকে গ্রাহাই কারিত না, এখন এরকম কেন হয় বুঝিবার চেষ্টা করে, এরকম হওয়া বন্ধ করার কোন উপায় আছে কি না বসিয়া বসিয়া তাই ভাবে। তবে, মোটামুটি তাকে সুখীই বলা যায়। পাঁচবছরের বেশী সময়ের ব্যবধানে ও কে জানে কতখানি দূরত্ব পার হইয়া সুনীতির মাথায় ওমিলনাইন তেলের গন্ধ তার নাক ও মনের সঙ্গে যে রসিকতা করিতে আসে, সেই অল্প সময়ের জন্যই { কিছুক্ষণ একটা দুর্বোধ্য যন্ত্রণা ভোগ করিবার পরেই সে সুস্থ ও স্বাভাবিক হইয়া উঠিতে পারে। তখন আর বুঝিবার উপায়ও থাকে না যে তার শান্ত হাসিখুশী মুখের পিছন দিকে, চুলেঢাকা খুলির শক্ত হাড়ের তলে যে নরম মগজটা আছে তার মগ্ন-চেতনার অংশটুকুতে বাস করে এমন খাপছাড়া একটা বিকার। হাসিরাশিকে প্ৰমথের এতই ভাল লাগিয়াছে যে, কয়েকদিনের জন্যও তাকে ছাড়িয়া থাকিবার কথা ভাবিলে সত্যসত্যই তার কষ্ট হয়। এ রকম সরলা; স্নেহময়ী, বুদ্ধিমতী ও সহজাত সু-ভাবাপন্ন স্ত্রী পাওয়ার জন্য নিজেকে সে ভাগ্যবান মনে করে। বিবাহ করার আগে যা ছিল শুধু অসম্ভব কল্পনা, যে সুখ ও শাস্তিয় স্বরূপ সে প্ৰায় ভুলিয়া যাইতে বসিয়াছিল, জীবনের নিরপেক্ষ সদয় দেবতার কল্যাণে আজ সে প্ৰায় সবই ফিরিয়া পাইয়াছে। শুধু ওমিলনাইনের অত্যাচার সহ করিবার দুর্ভাগ্যটা যদি তার না হইত ! আদর্শ জীবন হইত। তার, কোন দিকে এতটুকু খুত থাকিত না । এমনিভাবে দিন কাটিতে কাটিতে পূজার ছুটি আসিয়া পড়িল, আত্মীয়স্বজনের মধ্যে ছুটিটা কাটাইবার জন্য প্রমথ সন্ত্রীক আসিল কলিকাতায়। কলিকাতায় পৌছিবার দিনই সন্ধ্যার পর তার রহস্যময় মোহের রাজ্য হইতে ওমিলনাইনের গন্ধ ভাসিয়া আসিয়া তাকে ভয়ানক উতলা করিয়া দিল । পরদিন সকালে সে হাসিকে বলিল, তুমি মাথায় যে তেল মাখো ওটার গন্ধ ভারি বিশ্ৰী। আমি একটা আশ্চৰ্য তেল এনে দিলে মাখবে ? আশ্চর্য তেল আবার কি জিনিস গো, এ্যা ? F কয়েকটা ভিন্ন ভিন্ন তেল মিশিয়ে আমি নিজেই তৈরী করে দেব, মাখবে তো ? ওমা, কেন মাখিব না ? চুল উঠে গেলে কিন্তু মজা দেখাবো তোমায়! আিস, দায়িত্ব তোমার । ، حمص (፩ ዓ ሕy