পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্মের ইতিহাস খোকার আসার যখন মাস কয়েক বিলম্ব ছিল মধ্যরাত্রি পর্যন্ত দুজনের জল্পনা কল্পনার আর বিরাম থাকিত না । তার অৰ্দ্ধেক বাস্তব অৰ্দ্ধেক অবাস্তব এবং প্ৰায় সমস্তটাই স্বপ্লবৎ মনোরম। এ হেন আশ্চৰ্য সম্ভাবনা যেন জগতের আর কােন নরনারীর জীবনে আজ পর্যন্ত দেখা দেয় নাই। তিন বছর ধরিয়া তাহাদের যে অনন্যসাধারণ প্ৰেম বসন্তের ফুলবনে পথ-ভোলা পথিকের মত লক্ষ্যহীন দায়িত্বহীন বাধাহীন অবস্থায় ঘুরিতেছিল। আজ লক্ষ্যের সন্ধান পাওয়া মাত্র সে প্রেম তাহাদের স্বর্গে মর্ত্যে অতীত ভবিষ্যৎ ইতিহাসে সকল প্রেমের মধ্যে অতুলনীয় হইয়া গিয়াছে। লণ্ঠন নিবাইয়া সুলতা তেলের প্রদীপ জালিয়াছে, তাহারা ঘুমাইয়া পড়বার পরেও ঘরের কোণে এ দীপ জ্বলিতে থাকে। খানিক, আবোল তাবোল বকিবার পর বিকাশ বলে, “বোঁ অনেকের থাকে সুলতা, কিন্তু তোমার মত বৌ সুলতা মনে মনে বলে, “কত জন্মের তপস্যা আমার সেটাতো দেখতে হবে ? বিকাশের উজ্জ্বাস জাগে, আন্তরিক নাটকীয় সুরে সে বলে, “না। সুলতা, তুমি শুধু আমার প্রিয়ী নও, প্রিয়ারও বেশী। ঠিক যে তুমি কি তা অবশ্য আমি বলতে পারি না। কিন্তু বেশ বুঝতে পারি তুমি প্রিয়ারও অতিরিক্ত কিছু।” লজ্জায় সুলতা হাসে, বলে, “দ্যাখো, এত বাড়িও না। এতদিন বাইরের লোক ন্ত্রৈণ বলেছে, এবার তাহলে আমিও বলতে শুরু করব।” বিকাশ বলে ‘হু বল না। গলা বুজে আসবে । স্ত্রীকে যে দুৰ্ভাগার ভালবাসতে পারে না তারাই পরকে স্ত্রৈণ বলে গাল দেয়। তুমি কি ওকথা बनऊ १lद्ध ?' সুলতার চোখ ছল ছল করিয়া আসে। স্ত্রীকে যে দুৰ্ভাগার ভালবাসিতে পারে না। তাহারা সুলতার অজানা জগতের মানুষ নয়। পাশের বাড়িতেই চরম দৃষ্টান্ত রহিয়াছে। কি কান্নাই বৌটা এক একদিন কঁদে ? ভালবাসুক আর না বাসুক স্ত্রীকে যার অমন ভাবে কঁদতে হয় সে দুর্ভাগা বৈ কি!-- ভালবাসার ভবিষ্যৎ ভাগবঁটোয়ার নিয়া রোজ তাহদের তর্ক হয় । সুলতা স্বীকার করে না তার ভালবাসার সীমা আছে। ছেলেকে ভালবাসা ●b8