পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী ভয় বাসা বাঁধে। স্বামীর একটা হাত বুকে চাপিয়া সে অনেক রাত্রি অবধি নীরবে জাগিয়া থাকে, বিকাশ তাহার বক্ষের দ্রুত স্পন্দন অনুভব করে । ‘ভয় কি সুলতা ?” সুলতা আরও শক্ত করিয়া তাহার হাত চাপিয়া ধরে। কথা বলিতে গিয়া তাহার মুখ দিয়া কথা বাহির হয় না। আত্মীয় পরিজন সকলের মুখে অল্পবিস্তর চিন্তার লক্ষণ দেখা দেয়, বয়স্কের মাঝে মাঝে গভীরভাবে নানারকম পরামর্শ করেন, মন্থরগতিতে আগামী ঘটনার জন্য প্ৰস্তুত হওয়ার আয়োজন চলিতে থাকে । \ বিকাশের বিধবা মা, মা কালীর কাছে মানত করেন, ভ্যালয় ভালয় একটি খোকা দিও মা, খোকা দিও। জোড়া পাঠ দিয়ে পূজো দেব। কোথা হইতে গোটা তিনেক মাদুলি সংগ্ৰহ করিয়া পুত্রবধুর বাহুতে বাধিয়া দিয়াছেন, কিন্তু শুধু কি মাদুলির উপর নির্ভর করিয়া থাকা যায় ? মা কালীর ঘাড়েও দায়িত্ব চাপাইয়া তিনি স্বস্তি খোঁজেন। কি জানি কি হইবে ? একবার ভালয় ভালয় হইয়া গেলে পরের বার অনেকটা নিশ্চিন্ত থাকা চলে। প্ৰথমবারই যত ভয় । আপিসের কাজে বিকাশের মন বসে না, চলিতে বার বার কলম থামিয়া যায়, সময় যেন ভ্ৰণভারবাহী মন্থর-গমনা। অলস বধু। বাহিরে কোনদিন রোদ ওঠে কোনদিন মেঘের ছায়া পড়ে কোনদিন অবিশ্রাম ধারাপাত হয় । ফ্যানের বাতাসে কাগজপত্ৰ মৃদুশব্দ করিয়া নড়িতে থাকে, চোখ বুজিলে মনে হয় কোরা তাতের শাড়ী পরিয়া সুলতা কাছে আসিয়া দাড়াইয়াছে। সুলতার নিকট হইতে কয়েক ঘণ্টার জন্য দূরে থাকাটাও বিকাশের কাছে আজকাল অভিনব হইয়া উঠিয়াছে। দুর্ভাবনার মধ্যে সুলতার সঙ্গ সে এমন নিবিড়ভাবে অনুভব করিতে পারে, মমতার এমন সব অভূতপূর্ব অনুভূতির সন্ধান সে পায় যে তাহার মনে হয় শুধু সুলতার নয় নিজেরও অনেক আশ্চৰ্য গোপন পরিচয় ধরা পড়িতেছে। এ অমৃত যে একদিন ভালবাসার ভিত্তিগত দৈহিক প্রয়োজনেই সীমাবদ্ধ ছিল বিকাশ আর তাহা বিশ্বাস করে না । তাহার মনে হয়। বহুকাল ধরিয়া সে শুচিশুদ্ধ তপস্যা করিয়াছিল এতদিনে সিদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দিয়াছে। মানুষের প্রতি (ry)