পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী পরিচয়ের কাছে তাহার প্রিয়া ও পত্নী সংজ্ঞা তুচ্ছ হইয়া যাইবে। যাক, তাহ ৭ অপ্ৰিয় নয়, কিন্তু এই মহেন্দ্ৰক্ষণ সন্নিকট হইলে প্রিয়ার বিবৰ্ণ কপোলে যে ক্ষুদ্র একটি চুম্বন দেওয়া হয় নাই সে আপসোস এ জীবনে আর ঘুচিবে না। ’ সুধাকে ইঙ্গিতে কাছে ডাকিয়া বিকাশ বলিল 'বৌদিকে বলগে আমি এসেছি।” সুধা আতুড় ঘরে ঢুকিল এবং ফিরিয়া আসিয়া বলিল 'বৌদি জানে।” জানে! কেমন করিয়া জানিল ? সে জোরে কথা বলে নাই, শব্দ করিয়া হাটে নাই, তবু খবর পৌছিল ? বিকাশ চাহিয়া দেখিল ঘরে কি আলো জ্বালা হইয়াছে জানালাটা পর্যন্ত ভাল করিয়া আলো হয় নাই। আলোর কাপণ্যে তাহার রাগ হইয়া গেল। সে ভাবিল, আর আধঘণ্টার মধ্যে ও ঘর যদি ইহারা ভাল ভাবে আলোকিত না করে সে নিজে ডে লাইট ভাড়া করিয়া আনিবে।

  • ওঘরে কে আছে রে সুধা ?”

“মা ও বাড়ীর পিসীমা আর দাই ।” 'भिन्न ?' “দিদির শরীর ভাল নয়, শুয়েছে।” বিকাশের বুকের মধ্যে ছ্যাৎ করিয়া উঠিল। এ সংবাদ শুভ নয়! মৃন্ময়ীকে সে ভালবাসে, তাহার জীবন সবদিক দিয়া ব্যর্থ হইবার পর করুণার রসে সে মমতা বাড়িয়াই গিয়াছিল। সুলতার সন্তান-সম্ভাবনার কথা প্ৰকাশ পাইবার পর তাহার মধ্যে যে ভাবান্তর দেখা দিয়াছিল। অন্য কাহারো কাছে ধরা না পড়িলেও তাহা বিকাশের চােখ এড়ায় নাই। আজ হঠাৎ মৃন্ময়ীর শরীর খারাপ হওয়ায় সবটুকু ইতিহাস অনুমান করিয়া তাহার মন খারাপ হইয়া গেল। সুলতার শুভকর বিপদে একি অমঙ্গলের ছায়াপাত ! জুতা খুলিয়া বিকাশ বারান্দার একপাশে রাখিয়া দিল। জামা খুলিয়া কলতলায় মুখহাত ধুইয়া আবার জল-চৌকীটাতেই বসিল। তাহার ভয়ানক ক্ষুধা পাইয়াছে। তামাকের তৃষ্ণাও যেন ক্ষুধার মতই অবুঝ। আপিস যাওয়ার সময় সুলতাকে সে নারকেল কোরাইতে দেখিয়া গিয়াছিল। তিক্তি টক্তি কিছু করিতে পারিয়াছিল। কিনা কে জানে!! করিয়া থাকিলেও চাহিয়া খাইতে বিকাশের ইচ্ছা! হইল না। ক্ষুধার জালা সামান্য, সুলতা আমন কষ্ট পাইতেছে সামান্য ক্ষুধার জন্য সে ব্যস্ত হইবে ? সুলতার যন্ত্রণা তাহার খাওয়া না খাওয়ার উপর নির্ভর করে না, খাওয়ার স্বপক্ষে এ ছাড়া আর কি যুক্তিই বা আছে। (S) 8