পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্মের ইতিহাস রান্নার ভারটা এবেল সুধার উপরেই পড়িয়াছিল। মুখ তাহার গভীর ও চিন্তা-ভারাক্রান্ত। একটা বাটিতে মুড়ি আর কয়েকটা নারকেল সন্দেশ আনিয়ৰ সে দাদার হাতে দিল, তামাকও সাজিয়া আনিল। তার পর অন্তরঙ্গ বান্ধবীর মত চাপা গলায় জিজ্ঞাসা করিল 'বৌদিকে একবার দেখবে দাদা ? সারাক্ষণ তোমায় খুজছিল।” বলিতে বলিতে দাদার প্রতি উচ্ছসিত মমতায় কচি মেয়েটার চোখে জল আসিয়া পড়িল । বিকাশ বিস্মিত হইয়া বলিল “থাক।” “আচ্ছ।' বলিয়া রান্নাঘরে ঢুকিয়া সুধা চােখ মুছিতে লাগিল। দাদার দুঃখ এ বাড়ীতে তাহার চেয়ে কে ভাল করিয়া বোঝে। সারাদিন খায় নাই, কিন্তু কেমন অনিচ্ছার সঙ্গে দাদা মুখে খাবার তুলিতেছিল ? হুক হাতে নিয়া কতক্ষণ টান দিতে খেয়াল থাকে নাই ? সমবেদনায় সুধার বুক ফুলিয়া ফাপিয়া উঠিতে লাগিল। ডালে কঁাটা দিতে দিতে মুখ চোখ বিকৃত করিয়া ঠোঁট কামড়াইয়া সে উচ্ছসিত কান্নার আবেগ ঠেকাইয়া রাখিল। মনোবৃত্তির এমন ভয়ানক বিপৰ্যয় তাহার ক্ষুদ্র জীবনে আর দেখা দেয় নাই। প্ৰথমে এতটা হয়। নাই, দাদার মান মুখ ও ছলছল চোখ দেখা অবধি সে আর সহ্য করিতে পারিতেছিল না । এদিকে তামাক টানিতে টানিতে চারিদিকে চাহিয়া বিকাশ ক্রমাগতই মনে মনে আশ্চর্য হই. যাইতেছিল। এই সময়টির যে কল্পনা সে মনে মনে করিয়া রাখিয়াছিল তার সঙ্গে কিছুমাত্র মিল নাই। সে রকম ছুটিাছুটি হাকাহাকি হইতেছে। কই ? সমস্তই ধীর মন্থর গতিতে ঘটিয়া চলিয়াছে। পুরাতন কাপড় নিতে আসিয়া মা পরম নিশ্চিন্ত মনেই যেন চাকরকে জিনিসের ফর্দ লিখিয়া পয়সী। বুঝাইয়া দিলেন, দাড়াইয়া দাড়াইয়া বােসগিন্নির সঙ্গে দু'দণ্ড আলাপ করিলেন, রান্না সম্বন্ধে সুধাকে কয়েকটা উপদেশও দিলেন। মৃন্ময়ী উপবে শুইয়া আছে, পাচু বোধ হয় তার ছোট আলোটি জালিয়া অঙ্ক কষিতে বসিয়া গিয়াছে, বেচারীর হাফইয়ারলি পরীক্ষা আসন্ন। আঁতুড়ের দিক হইতে কাঠকয়লা পুড়িবার একটা গাঢ় গন্ধ ভাসিয়া আসিতেছে। দাইয়ের অবিশ্রান্ত বকুনি ও মাঝে মাঝে সুলতার মৃদু কাতরাণি ছাড়া ও ঘরে শব্দ নাই চাঞ্চল্য নাই। অথচ এ কি সহজ ও সাধারণ ব্যাপার! পুৱা দশটি মাস ধরিয়া বিধাতা