পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ऊऐ3 घ আকাশ-ভাঙা বর্ষার মধ্যে আমাকে পথহারা পথিক হিসাবে কল্পনা করতে হবে। পথ দিয়ে ইটিছি না। মাঠ দিয়ে হাটছি। মাঝে মাঝে তাও ঠিক রাখা অসম্ভব হয়ে উঠছিল। কারণ, জলের নীচে পথ আর মাঠ একাকার হয়ে গিয়েছে। পথটাও অবশ্য ছিল নামেই পথ, মাঠের বুকে পায়ে পায়ে গড়ে ওঠা একটা রেখা । তবু সে রেখা ধরে চলাবার একটা সুবিধা থাকে যে শেষ পর্যন্ত লোকালয়ে পৌছানো যায়, অন্ধের মত আধ হাত জলে ছপ-ছপ পা ফেলে যেদিকে খুশী চলতে থাকলে ডোবা পুকুরে পড়বার সম্ভাবনা থাকে বেশী এবং শ্মশানে বা জঙ্গলে গিয়ে হাজির হবার সম্ভাবনা থাকে তার চেয়ে কিছু কম। তবু দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভিজে কোন লাভ নাই, সমস্ত রাত বৃষ্টি না ধরলে সমস্ত রাত্রিটাই তার ফলে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভিজতে হয়। তাই, আন্দাজে এগিয়ে চলছিলাম। সামনে অথবা পিছনে, তা বলতে পারব না । এমনি ভাবে চলতে চলতে ভাঙা ঘরখানার সন্ধান পেলাম। আকাশ অবশ্য মাঝে মাঝে আলো সরবরাহ করছিল, সেই আলোতে চোখে পড়ল। খড় অথবা শণের প্রকাণ্ড একখানা কঁাচ ঘর ভেঙে পড়ে আছে। আশে পাশে আর ঘর না দেখে একটু বিস্ময় আর বিরক্ত বোধ করলাম। এক ভিটার এত বড় একখানা ঘর তুলে সাধারণতঃ কেউ বাড়ী করে না, চার ভিটায় না হোক এবং প্রত্যেক ভিটায় এত বড় না হোক, অন্ততঃ তিন ভিটায় তিনখানা ঘর তোলা হয়। বিদ্যুৎ চমকাবার প্রতীক্ষায় চুপ করে দাড়িয়ে ভাবতে লাগলাম, এটা কি তবে গৃহস্থের বাড়ী ছিল, না কোন বিশেষ প্রয়োজনে কোন একদিন মাঠের মাঝখানে কেউ একখানা ঘর তুলেছিল, তারপর প্রয়োজন শেষ হয়ে যাওয়ায় ঘরখানা মুখ থুবড়ে পড়ে যাওয়াতেও কেউ খেয়াল করেনি ? কিন্তু তা’হলে তো চারিদিকে আগাছার জঙ্গলের মাথা তুলবার কথা। ভাঙা ঘরের পাশ কাটিয়ে একটু এগিয়ে যাবার পর এ সমস্যার মীমাংসা হ'য়ে গেল। বাড়াটা যে গৃহস্থের, চার ভিটাতে সে চারখানা ঘরই তুলেছিল বটে। ভাঙা ঘরের দু'পাশের ভিটায় আরও দু’খানা ঘর ভেঙে পড়ে আছে এবং বিপরীত দিকের ভিটায় দাঁড়িয়ে আছে ছোট একখানা ঘর। প্ৰথম ভাঙা ঘরখানার কাত হয়ে পড়া প্ৰকাণ্ড চালাটার পিছনে দাড়িয়ে থাকায় এতক্ষণ চোখে পড়েনি। 'Agy8