পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী কাপড়-জামার পুটুলি এবং সাধারণ গৃহস্থের ঘরকন্নার অসংখ্য টুকিটাকি জিনিস। কেরোসিন কাঠের একটা টেবিলের অর্ধেকটাতে ছেলেদের স্কুলের ছেড়া বই-খাতা, বাকী অৰ্দ্ধেকটাতে শিশি-বোতল, টিনের কৌটা, কাগজের ঠোঙ্গ-ইত্যাদি। একদিকের বেড়ার গায়ে কাঠের থামে ঠেসান দেওয়া একটি পুরানো ভাঙ্গা সাইকেল গোটা চারেক রঙচটা লোহার। আর গোটা দুই বেতছেড়া কাঠের চেয়ার, একটা পায়া ভাঙ্গা টুল আর সাত আটটি ছোট বড় কাঠের পিাড়ি প্রভৃতি বসবার সরঞ্জামেরও অভাব নেই। একখণ্ড তক্তার উপরে বোধ হয় তিনটি চালের বস্তা, কাছেই তিনটি তারকারীর ঝুড়ি। চৌকীর তলে অসংখ্য আবছা জিনিসপত্রের একপাশে মস্ত একটা বঁটির ফলা চকমক করছে। খাটের তলাটাও জিনিসে ঠাসা, কিন্তু সেখানে বোধ হয় নিজেকে ঘোষণা করতে পারে এরকম ঝকমকে কিছু নেই। এককোণে পুরানো ভাঙ্গা জিনিসপত্রের স্তৃপ—আবর্জনার সামিল। অন্য কোণে বিরাট একটা কাঠের সিন্দুক, ছোটখাট একটা চৌকীর সমান। সিন্দুকের উপরে বিছানা পাতা, বিছানায় বসে আছে। বছর পঞ্চাশেক বয়সের শীর্ণ-দেহ একটি লোক। দুয়ারের কাছে একটু স্থান ছাড়া মেঝে আর চোখে পড়ে না, যে জায়গাটুকুতে জিনিস নেই সেখানে বিছানা পাতা হয়েছে। কেবল মেঝেতে নয়, টিনের চাল থেকে দড়ি বেঁধে যত কিছু ঝুলিয়ে রাখা সম্ভব তাও রাখা হয়েছে। ঘরের সমস্ত জিনিসের তালিকা দেওয়া সম্ভব নয়, তা হলে মস্ত এক সম্পন্ন গৃহস্থের শোবার ঘর, ভঁড়ার ঘর, আর রান্নাঘরে যত জিনিস থাকে তার প্রত্যেকটির নাম করতে হয় । মাথার উপরেও যে জিনিস ঝুলছে এটা আমাকে আবিষ্কার করতে হল বাধ্য হয়ে। মেঝের বিছানাতেও চার-পাঁচটি ছেলেমেয়ে অঘোরে ঘুমোচ্ছিল, তাদের মধ্যে একটি মেয়ের বয়স - পনের ষোেলর কম হবে না । ছোট ভাইবোনদের মত পরণের শাড়ীখানাকে সেও একেবারে ত্যাগ করেছে। নজরে পড়ামাত্র চোখ তুলে মাথার উপরে ঝুলানো একটা বেতের ঝাঁপির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। বেতের বাপি তো ঝুলানো থাকেই না, এই বয়সের মেয়ে দম আটকানো গরমেও ঘুমের মধ্যে অঙ্গের আবরণ ঘুচিয়ে দেয় না। সাত আট মাসের একটি শিশুকে কঁাখে নিয়া যে মহিলাটি কালিপড়া লণ্ঠন জালিয়েছিল দরজার ঝাপও বোধ হয় খুলেছিল সে-ই, কারণ সিন্দুকের উপরের বিছানা ছেড়ে লোকটি যে নীচে নামেনি বুঝতে কষ্ট হয় না। এতক্ষণ উবু হয়ে বসে VSV