পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Vse o বড় মেয়েটি মুখের কাছে হাটু জড়িয়ে জড়সড় হয়ে বসেছিল আর থেকে থেকে আড়চোখে তাকাচ্ছিল আমার দিকে। আমার মত শ্ৰান্ত ক্লান্ত ঘুমকাতুরে মানুষের দৃষ্টিকে ও পীড়ন করে মুখে তার এমন গভীর ক্লিষ্টতার ছাপ। খাটের ওপর থেকে মহিলাটি তাকে ডেকে বলল, “ছোট একটা থালায় নাড়ু আর নারকেলের সন্দেশ দে-দুটো আমি কেটে দে ।” আমি হাত জোড় করে লোকটিকে বললাম, দোহাই আপনার, এত রাত্রে আর খেতে বলবেন না, মরে যাব। আশ্রয় যে পেয়েছি। তাই ঢের—” লোকটি ব্যথিত কণ্ঠে বলল, “কিছুই খাবেন না, সামান্য কিছু ? ঘোমটার ভেতর থেকে উৎসুক কণ্ঠে শব্দ এল, “সব ঘরেই আছে, হাঙ্গামার কথা মনে করে যেনে-” যে চোখে দশ মিনিট আগে তাকে উলঙ্গ দেখেছিলাম। আমার সেই চোখের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে মেয়েটি নিঃসঙ্কোচে আগ্রহের সঙ্গে বলল, ‘छेि ना ?” আমি ধীরে ধীরে টের পাচ্ছিলাম, এ বাড়ীতে আমিই প্ৰথম অসময়ের অতিথি নই, হয়তো এই ছোট ঘরখানাতে এরকম অবস্থাতেও আরও অতিথি বাস করে গিয়েছে। কর্তা, গিন্নি, বা মেয়ে, কারও কাছে আমি অনভ্যস্ত বিপজ্জনক আবির্ভাব নাই । আমার খাওয়া এবং শোয়ার ব্যবস্থা করার ভাবনায় তলে তলে এদের পাগল হওয়ার উপক্রম হয় নি—এদের পরিচর্যার ভূমিকাটুকুই আমাকে যা করে ফেলার উপক্রম করেছে । মুখ গম্ভীর করে বললাম, 'পেটের অবস্থাটা ভাল নয়, কিছু খেলে সইবে না ।” তখন কর্তা আর গিন্নি প্ৰায় একসঙ্গেই সায় দিয়ে বলল, “তবে থাক।” কিন্তু ঘুমন্ত ছেলে-মেয়ে কয়েকটিকে টানা হেঁচড়া করার ব্যবস্থাটা যে কি করে রদ করা যাবে ভেবে পেলাম না। অতবড় একটা খাট দখল করে আমি এক শুয়ে থাকব। আর ওরা কেউ শোবার জায়গা পাবে না। ওদের সঙ্গেই খাটে শোয়া চলে। কিনা একবার বিবেচনা করে দেখলাম, কিন্তু সেটাও সম্ভব মনে হল না । কাঠের সিন্দুকের উপরে বসে খাটের জোরালো গন্ধটা অনুভব করছিলাম, ছেলেমেয়েদের সরিয়ে নতুন চাদর বিছিয়ে দিলেও গন্ধটা অন্তর্ধান করবে বলে ভরসা। | sl || w9)